আর্টওয়ার্ক: নগরবাসী বর্মন
প্রবন্ধ পরিচিতি: শ্যারন আর. শ্যারম্যান, পরিচালক ফোকলোর প্রোগ্রাম এবং ইংরেজির অধ্যাপক, ওরিগোন বিশ্ববিদ্যালয়। ‘‘ফোকলোর/সিনেমা: পপুলার ফিল্ম অ্যাজ ভার্নাকুলার কালচার” নামে একটি সম্পাদনা করেন শ্যারন আর. শ্যারম্যান এবং মাইকেল জে.কোভেন। বইটি ইউটা ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশ করে।
অনুবাদ:
ফোকলোরকে সংরক্ষণ অথবা উপস্থাপনের জন্য চলচ্চিত্রকে ব্যবহার করার এই সংক্রান্ত পাঠকে নিয়ে গবেষণার জন্য ফোকলোর বিদ্যা শাখার অন্যতম একটি উপশাখা হলো চলচ্চিত্র এবং ফোকলোর। দর্শকদের দেখানোর জন্য যেসকল চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়, শারন আর.শারম্যান সেগুলোকে ‘ফোকলোরিক চলচ্চিত্র’ বলেছেন। ভিডিও প্রায়শ ‘চলচ্চিত্র এবং ফোকলোর’- এর অন্তর্ভুক্ত এবং এর আর একটু উন্নত ব্যবহার হতে পারে ‘ফোকলোর এবং ভিডিও’- অথবা হতে পারে ‘ফোকলোরিক চলচ্চিত্র’এটি একপ্রকার সাধারণীকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সম্ভবত জুড়ে দেওয়া দৃশ্যগুলোই এই সংজ্ঞার ভিতর পড়ে, বেশির ভাগ চলচ্চিত্রই আসলে ঐ ভিডিও’র আওতাভুক্ত।
‘চলচ্চিত্রের সত্যতা’এর মত তথ্যচিত্রের শুটিং করা হয়, আমেরিকার কিছু ফোকলোরিক চলচ্চিত্রে নির্মাণ করা হয় ছোট ছোট কৌতূহল উদ্দীপক প্রপঞ্চকে ধারণ করার ভিতর দিয়ে, যেটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাজে দেবে। অন্য ফোকলোরিক চলচ্চিত্রগুলোকে প্রচ-ভাবে একই রকম বর্ণনামূলক ভাবে, আঙ্গিক দ্বিতীয় মহাবিশ্ব যুদ্ধের আগে থেকে উনিশশ ষাট্ট- এর দশক পর্যন্ত চালু ছিল। হঠাৎ করে ফোকলোরিক চলচ্চিত্রের ভিতর ব্যবহার শুরু হয়, হয় সিনেমা ধরন অথবা উত্তর ধরন কৌশল যেটা একই সঙ্গে ফেকলোরকে এক রৈখিক ভাবে ধ্বনি এবং চিত্রের প্রক্রিয়া হিসেবে কার্যকর থাকে ( এতে নির্দেশনা, পরিবেশনা এবং সৃজনশীল প্রক্রিয়া থাকে)। অন্য চলচ্চিত্রগুলো যেখানে প্রতিফলন এবং অন্তঃবিষয় নির্ভর, চলচ্চিত্র নির্মাতা এখানে একত্রিতকরণে অন্যতম একজন হিসেবে কাজ করে।
অনেক ফোকলোরবিদ আছেন যারা ডকুমেন্টারিফিল্মের প্রথম দিকের যেসকল নির্মাতা রয়েছেন, তাদের তৈরিকৃত মডেল অনুসরণ করেই চলচ্চিত্র নির্মাণে উৎসাহিত বোধ করেছেন, এবং ধারণাগত দিক থেকে তা অবশ্য পূবর্তন ফোকলোরবিদের রেখে যাওয়া ভিত্তি ভূমির ওপর। এইভাবে, ফোকলোরিক চলচ্চিত্রগুলোতে, গ্রামীণ জীবন নাগরিক জীবনের চেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়ে আসছে, অতীত ইতিহাসকে গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করা হচ্ছে সমসাময়িক বিষয়গুলোর চেয়ে। উদাহরণ দেওয়া যাক, জন কোহেন শিশু গীতিকার অনুধানে অ্যাপালেচিয়ায় যান এবং লোকগানের তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন, ‘দ্য হাই লোনসাম সাউন্ড’ (১৯৬২); লেস ব্ল্যাক অল্পপরিচিত লোক নিয়ে কাজ করতেন যার একরকম আমেরিকার এলাকাগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন, যেমন- কাজুন এবং ক্র্যারোলিস যেটি লুইসিয়ানা ব্যায়ো, ডাই উড এবং হট পেপার (১৯৭৩) এবং স্প্যান্ড ইট অল (১৯৭০); বিল ফেরি নির্মাণ করেন তথ্যচিত্র তৈরি করেন মিসিপিসির গ্রামীণ জীবনের জাদুকর নিয়ে, নাম দেন গ্র্যাভেল স্প্রিং ফাই এন্ড ড্রাম (১৯৭১)। যাইহোক, এই চলচ্চিত্রনির্মাতাগণ সমসাময়িক কার্যক্রমগুলোকে অনুসন্ধানের ভিতর রাখেন, তাতে করে নাগরিক দৃশ্যেরও অন্তর্ভুক্তি সম্ভব হয়।
সাধারণত, এর সূচনা হয় রোমান্টিক বাধা ধারণা থেকে ঐ ফোকদের জন্য তাদের উদ্দেশ্য প্রণোদিত চলচ্চিত্র এবং তাদের স্বীকৃতির প্রয়োজন পড়ে একটা বড় ধরনের সংজ্ঞার যার ভিতর দিয়ে তাদের নির্মিত চলচ্চিত্রের পরিসরও বাড়ানো যায়।
বেশির ভাগ ফোকলোর চলচ্চিত্র নির্মাতা আসলে আগ্রহী থাকে কাহিনি বলার কৌশল এবং নান্দনিকতার প্রতি, দর্শকদের যা দেখানো হয়, উপস্থাপনের মাধ্যমে সেটিই আসলে নির্মাতাদের একপ্রকার অর্জন। নিচের কিছু চলচ্চিত্রে নান্দনিক কাঠামোর গড়ে উঠেছে, যেমন- ফেরি’র আই আরেন্ট লাইং (১৯৭৫) এবং মেইড ইন মিশিশিপি (১৯৭৫) এবং কিছু খাদ্য নির্ভর চলচ্চিত্র ( যেমন- গারলিক ইজ অ্যাজ গুড অ্যাজ টেন মাদারস (১৯৮০), এইগুলো আরো তাৎপর্যময় হয়ে ওঠে যখন আমরা আবিষ্কার করি যে, এই চলচ্চিত্র নির্মাতাগণ বিষয় ভিত্তিক তথ্যচিত্র নির্মাণের সময় আসলে কী ধরনের ভাবনা ভেবে ছিল। ঐতিহাসিক-পুর্ননির্মাণে চলচ্চিত্র, উদাহরণ হতে পারে প্যাট ফেরিরিও’র হার্টস এন্ড হ্যান্ডস (১৯৮৭), এর কাহিনি সংগ্রহ করা হয়েছে সম্ভবত জার্নাল, ডায়েরি এবং লেখকদের চিঠি-পত্র থেকে।
বেশির ভাগ ফোকলোরিক চলচ্চিত্রই কোন না কোন গোষ্ঠীর তথ্যচিত্র, যেমন- ব্লানকসের সাইবেরিয়ান আমেরিকানদের নিয়ে ‘ভিজিলি’(১৯৮৭), একই সঙ্গে আমেরিকান ফোকলোর চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আগ্রহ কোন গোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক অবস্থান তুলে ধরা বা পুনঃরায় উপস্থাপন করা। ব্লানকসের প্রতিটি চলচ্চিত্রের ভিতর (যেমন ইাম, ইাম, ইাম: এ স্টেট অব কাজুন এন্ড ক্রেওল কুকিং (১৯৯০); কীভাবে কাজুনরা আঙ্গুর থেকে মদ তৈরি করে এবং বাঁধাকপি সংগ্রহ তার দৃশ্যায়ন; হোর্হে প্রলরেন লক্ষ করেন লুথার মেথির দিকে একজন আদর্শ লোক কবি চিহ্নিত করে, পাশাপাশি একজন বয়োজ্যেষ্ঠ কবি এবং কাঠের গুঁড়ি দিয়ে ঘর নির্মাতা হিসেবে নিয়ে ১৯৭৯ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে লুথার মেথির ইন নাইটি ফোর এই নামে। ফেরির তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন জেমস থমাস কে নিয়ে যেখানে তাঁকে একজন ব্লুজম্যান এবং একজন ডেল্টা ব্লুজ সংগীতের গল্পকথক হিসেবে চিত্রিত করা হয় (১৯৬৯) এবং আই আরেন্ট লিম (১৯৭৫); এবং শ্যারম্যান তৈরি করেন ক্যাথলিন ওয়ার:ক্লাটমেকার (১৯৭৯) এবং শৃঙ্খলাকৃতির ভাস্করের গ্রন্থিলবাহুর কথা বলেন ‘ স্পিরিট ইন দি উড’(১৯৯১)।
ফোকলোর চলচ্চিত্র নির্মাতাগণ জনসাধারণকে সাংস্কৃতিক এবং শৈল্পিক পুনঃউপস্থাপনকারী এবং একক ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিত্রিত করে। ফোকলোরবিদের কাছে, সিনেমার বৈচিত্র্য (সত্যিকার চলচ্চিত্র), শব্দধারণ করতে পারে এমন বাহনযোগ্য ক্যামেরা সঙ্গে নিয়ে, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাঠসমীক্ষার মাধ্যমে তথ্যচিত্র নির্মাণ করা এবং ১৯৬০ সালের শেষের দিকে মানুষের ভিতর যেসকল ফোকলোরিক আচার-আচারণ রয়েছে তার পর্যালোচনা করতে এবং সেটি তত্ত্বগত দৃষ্টিভঙ্গিকে মাথায় রেখে। বেশি দূরত্ব থেকে চিত্রধারণ এবং সমতান ভিত্তিক সুর নির্ভর চলচ্চিত্র বেশ আবেগের সঞ্চার করে। অবশেষে, জনসাধারণ অধ্যয়ন করতে থাকে তাদের নিজেদের কথা বলার জন্য এবং তারা নিজেদের কার্যকারণ বিশ্লেষণ করেন নিজেদের মত করে, কোনপ্রকার বক্ততার কিংবা প-িতের চাপে দেওয়া ছাড়ায়। একক দৃষ্টিভঙ্গির দেখা পাওয়া যায় সোম্যান (১৯৬২) নামক তথ্যচিত্রের ভিতর, যেখানে সিনেমা স¤্রাট জোসেপ ই. লেভিনি কে উপস্থাপন করেন ক্রালোট্ট জোরিন এবং আলবার্ট এবং ডেভিড মাইসলেস; এবং ডন’ট লুক ব্যাক (১৯৬৭), ডি.এ. প্যানেনব্যাকার চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বব ডিলানের ওপর, যেটি ফোকলোরবিদগণের নিকট একটি উদাহরণ হিসেবে সামনে আসে কীভাবে একজন একক ব্যক্তিকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের ভিতর দিয়ে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।
সেই চলচ্চিত্রগুলো স্বীকার করে থাকে তাদের শক্তি যেটা আপাতদৃষ্টিতে অভিজ্ঞতাকে উপস্থাপন এবং প্রকাশ করে থাকে, এটা সিনেমার কৌশলগত জায়গা থেকে আসলেই অনেকদূরে অবস্থান করে, প্রকাশ্য ভাবে বিষয়ী ক্ষেত্রের তৈরি করে, যাকে শ্যারম্যান নাম দিয়েছেন ‘‘উত্তর সিনেমা কৌশল’’, যেগুলো তথ্যচিত্রকে শৈল্পিক কাঠামো দান করে। যেহেতু সিনেমা কৌশল ছিল একধরনের বস্তুনিষ্ঠতার ছদ্মবেশী শিল্প, উত্তর সিনেমা কৌশল, এই বস্তুনিষ্ঠতার বিভ্রমী ছদ্মবেশকে সরিয়ে দেয় এবং এটিকে প্রকাশ্য করে তুলে। উদাহরণ দেওয়া যাক, জিমি সেল্টার (১৯৭০) যেটি কিনা রোলিং স্টোনের আমেরিকায় কনসার্টের ফ্ল্যাশব্যাকের ভিতর দিয়ে বোঝানো হয় আসলে কোনটি বাস্তব; অপরদিকে উডস্টক (১৯৭০), যেখানে পর্যবেক্ষণীয় রীতিতে ক্যামেরা পরিচালনা করা হয় এবং ইমেজকে কয়েকটি অংশে ভাগ করে উপস্থাপন করা হয়, শব্দ মেশানো, ছন্দোময় কৌশলে দৃশ্য ধারন করা হয় যেন শব্দের অন্য অংশ ভারসাম্যপূর্ণ উপায়ে যোগ করা যায়। দীর্ঘ দৃশ্যের এক ঘেয়েমি দূর করা হয় সম্পাদনার ছন্দোবদ্ধ উপায়ে, যেমনটা করা হয়েছে রোবেটা ক্যানটোসের ফোকলোরিক চলচ্চিত্র ক্লথলাইনস (১৯৮১) এর ভিতর। সাক্ষাৎকারে,সিনেমা কৌশলকে পরিহার করে, নতুন ভাবে সিনেমার প্রকৃতি নির্মাণ করার ঘোষণা দেওয়া, সম্ভবত উত্তর সিনেমা কৌশল আগের সিনেমা কৌশলের জায়গা অধিকার করে নিয়েছে, যেমন টম ড্যাভেনপোর্টসেরফোকলোরিক চলচ্চিত্র এ সিংগিং স্ট্রিম (১৯৮৭), জুডি প্রিজারের অল ডে, অল নাইট মেমোরিজিস ফ্রম বিয়াল স্ট্রিট মিউজিসিয়ান (১৯৯০), এবং পল ওয়েনগারের দ্য গ্রান্ড জেনারেশন (১৯৯৩)। প্যারিস ইজ বার্নিং (১৯৯১), জেননি লিভিংস্টোনের এ পোস্ট ভ্যারাইটি তৈরি হয় সাক্ষাৎকার, সিনেমা বৈচিত্র্যপূর্ণ কৌশলগুলো এবং আন্তঃশিরোনাম থেকে। যুক্তরাষ্ট্রে এই অংশটা প্রায় হারিয়ে গিয়েছে, যেখানে সিনেমা কৌশল ব্যবহার করা হয় গল্প বলার জন্য ‘অন্য জনসাধারণ’ যাদের আসলেই গণমাধ্যমের উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার কোন পথ নেই। উত্তর সিনেমা কৌশল নিয়ে ‘অন্যরা’ তাদের নিজেদের সিনেমাটিক গল্প বুনতে থাকে, সরাসরি তারা ক্যামেরা পরিচালনা করতে থাকে যেন তারা প্রকৃতিই ঐ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে প্রকাশ্য স্বীকৃতির দানের ভিতর দিয়ে, উত্তর সিনেমা কৌশল এবং চলচ্চিত্রের ভিতর একটা অন্বয় বা সম্পর্ক নির্মিত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জুলিয়ে সারাভিনো তার নিজের সংস্কৃতি বিষয়ক চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ শুরু করে এবং বিষয়টিকে তার নিজের আমেরিকা এবং ইকুয়েডর দুটি অঞ্চলের মিশ্র সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতার বয়ানে রূপান্তর করে, সেই চলচ্চিত্রের নাম দেন -জুলিয়ে, ফেসিং দ্য টুয়েন্টি ফাস্ট সেনচুরি (১৯৯৩)। এই চলচ্চিত্রে, সারাভিনো নিজেই নিজকে ঘিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। এমন কিছু তথ্যচিত্রের মত চলচ্চিত্র রয়েছে, যেখানে জনসাধারণ চলচ্চিত্র নির্মাতার নিজের সমাজের চিত্র পাওয়া যায়, যেটাকে শ্যারম্যান বলছেন – ‘নৃতথ্যচিত্র’, এটি এমন ধরনের তথ্যচিত্র চলচ্চিত্র যেটি কিনা চলমান জোয়ারের চলচ্চিত্রের মত ‘অন্য’ কে সংরক্ষণ করে , জনসাধারণ ধারণাগতভাবে এই ধরনের চলচ্চিত্র দলের সদস্য অথবা জাতিতাত্ত্বিক বর্ণনাকারীর ভূমিকা অবতীর্ণ হয়। জাতিতাত্ত্বিক বর্ণনাকারী সাংস্কৃতিক বিষয়-আশয়ে সমগ্রতা নিয়ে কম সচেতন থাকে এবং আগ্রহী হয়ে ওঠে সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক বিষয়ে (যেমন- জাতিগত পরব, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, উৎসব), ফলে তাদের চলচ্চিত্র অনেকটা ফোকলোরিক চলচ্চিত্রের মত হয়। ফোকলোরিক চলচ্চিত্র প্রাথমিকভাবে সামনে নিয়ে আসে ঐতিহ্যবাহী আচার, আমাদের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে এবং আচার, বাহ্য লৌকিকতা এবং লোক শিল্প, লোক বয়ান এবং লোকসংগীত, সাধারণ মানুষের জ্ঞানের অভিধাগুলোকে বিন্যস্ত করে তাদের জাতি, বয়স, জন (লিঙ্গ), পরিবার, পেশা, প্রতিক্রিয়া, ধর্ম এবং এলাকাগত জায়গা থেকে। ফোকলোরবিদ রিচার্ড এম. ডরসন একটি বিষয় চিহ্নিত করেন, ফোকলোরবিদের মাঠসমীক্ষার আচার নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। প্রকৃতশপক্ষে অনেক ফোকলোরিক চলচ্চিত্র নির্মাতা রয়েছে, যারা তাদের নিজেদের এলাকা দিয়ে ঐতিহ্যকে বাচ-বিচার করে, কখনো আবার এমনও দেখা যায় এই প্রক্রিয়া তাদের নিজেদের পরিবারের ভিতর দিয়ে দেখার প্রবণতা রয়েছে।
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য এবং জায়গা ফোকলোরিক চলচ্চিত্রকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় তথ্যচিত্র-চলচ্চিত্র ঐতিহ্য থেকে, যদিও কোন চলচ্চিত্রে যদি ফোকলোরের উপাদান যথাযোগ্যভাবে ব্যবহার করা হয় তবে সেই চলচ্চিত্রকে ‘ফোকলোরিক চলচ্চিত্র’ বলা হয়। যেমন ভাবে নৃবিজ্ঞানীগণ চলচ্চিত্রকে বলেন ‘জাতিতাত্ত্বিক’, যখন তারা সফল ভাবে নৃবিজ্ঞানীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করতে পারে, সত্যিকার অর্থে ফোকলোরিক চলচ্চিত্র বলতে বোঝানো হয়- যার বিষয় প্রাথমিকভাবে ফোকলোরবিদগণের অধ্যয়ন আওতাধীন এবং যার অভিপ্রায় বা প্রেরণায় থাকে ফোকলোরবিদগণের গবেষণা এবং পাঠদানের মত বিষয়। এমন চলচ্চিত্র তৈরিতে একের অধিক ফোকলোরবিদ থাকে অথবা ফোকলোরবিদ নয় এমন কেউ যুক্ত থাকে চলচ্চিত্র নির্মাতা অথবা চিত্রগ্রাহক হিসেবে ফোকলোরের দৃশ্যধারণ করে। সাধারণ ভাবে করা কাজ, বিষয়টা আসলে তারা ফোকলোরকে সংরক্ষণ বা ডকুমেন্ট করা, এমন জানাটা জরুরি না যে, কে নির্মাণ করছে।
চলচ্চিত্র এবং ফোকলোর গবেষণায় একটি অনন্য ও জনপ্রিয় টুস্টি তা হলো প্রাথমিক প্লট কাঠামো কিংবা বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্যের চলচ্চিত্রের ভিতর একটা সমন্বয় সাধন করা। উদাহরণের জন্য, দ্য সার্পেন্ট এন্ড রেইনবো (১৯৮৮) এর কথা বলা যেতে পারে, যেখানে ডাকিনীবিদ্যা চর্চার কীর্তিকলাপ দেখানো হয়েছে। হোয়েন আ স্ট্রানজার কল (১৯৭৯) চলচ্চিত্র যার ভিত্তিতে থাকে একটা টেলিফোন কল এবং ছেলেধরা নিয়ে শঙ্কিত থাকা নাগরিক কিংবদন্তি গল্প। চলচ্চিত্র অ্যাভালন (১৯৯০) একটি পরিবারের কাহিনি এবং নৃগোষ্ঠী বয়ানের কাঠামোর ওপর দিয়ে একটি পরিবারের দীর্ঘ বয়ান এবং নৃগোষ্ঠীর আশপাশ আমেরিকার বিশ্লেষণ ১৯৪০ এর দশক থেকে ১৯৬০ এর দশক পর্যন্ত, উদাহরণ হিসেবে এখানে একটা পরিবার কে উপস্থাপন করা হয়েছে। হোয়েন হ্যারি মেট সেলি (১৯৮৯) প্রকাশিত হয় বিয়ের আগের প্রেমের কাহিনি নিয়ে, যেখানে দেখানো হয় বিবাহিত দম্পতির আগের প্রেম এবং বিবাহ উত্তর জীবনের নানান ঘটনা।
স্মরণযোগ্য ফোকলোরের পুনঃউৎপাদন ঘটে ক্যান্ডিম্যান (১৯৯৩) চলচ্চিত্রে, যেখানে একজন ফোকলোরে ¯œাতক শিক্ষার্থী কিংবদন্তি কিভাবে কাজ করে তার গবেষণা করে, অথবা ভৌতিক কাহিনি ‘দ্য হুকড-আর্ম ম্যান’ যেটি কয়েক দশক ধরে কিশোরদের ভালোবাসা এবং ভয়ের জায়গা দখল করে রেখেছে, তার প্রকাশ ঘটেছে। এই চলচ্চিত্রে- কিংবদন্তি বাস্তব জীবনে চলে আসে, সেই মানুষ ¯œাতক সেই শিক্ষার্থীটিকে দৈহিক এবং মানসিক তীব্র যন্ত্রণার ভিতর ফেলে। জন হ্যারল্ড ব্রুনভ্যান্ড এর শহুরে কিংবদন্তির জনপ্রিয়তা দেখা যায়, এই ধরনের ফোকলোর অনেকটায় পারিবারিক আবহাওয়া থেকে বাইরের বৃহৎ জন সমষ্টির কাছেও তেমনি, দশকরা এই রূপক কোনপ্রকার সন্দেহ ছাড়ায় উপভোগ করে। ননঅ্যাকাডেমিক বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ চলচ্চিত্র সাধারণত প্রকাশিত হয় প্রায়শ সংঘবদ্ধ ফোকলোর নিয়ে, উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, নারীর গায়কী ‘বারবারা অ্যালেন’ (চাইল্ড ৮৪) এবং দ্য পিয়ানো (১৯৯৩) তে দেখা যাবে। অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র যেমন- অ্যানানসি দ্য স্পিডার এবং জন হেনরি তৈরি করা হয়েছে শিক্ষামূলক চলচ্চিত্রের বাজারকে সামনে রেখে। কিন্তু ফোকলোরিক চলচ্চিত্র অনেক বেশি মাত্রায় জনপ্রিয় সাধারণ দশকদের কাছে, যেমন ওয়াল্ট ডেজনি’র অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র সিন্ডেলা (পরী কথা)। ¯েœা হোইট এন্ড দ্য সেভেন ডুওয়াফ (১৯৩৭) থেকে গর্জিলা (১৯৫০) এবং বিউটি এন্ড দ্য বেস্ট (১৯৯১) , ওয়াল্ট ডিজনি স্টুডিও সামনে নিয়ে এসেছে ডিজনি কাঠামোর লোককাহিনি বৃহৎ সংখ্যক দর্শক শ্রোতার কাছে। দর্শক সম্ভবত এই চরিত্রাভিনয়গুলোকে আসল গল্পের মত করেই গ্রহণ করেছে, এই ধারণা (আইডিয়া) চরিত্র এবং কাহিনির ছবি দিয়ে পুনরাবৃত্তমূলক ব্যবসার দরজা খুলে দিয়েছে, যেমন বইয়ের ক্ষেত্রে, পুতুলের ক্ষেত্রে, খেলা (কম্পিউটার ভিত্তিক গেমস) এবং অন্যান্য খেলনায়। ফোকলোর ক্রমেই চলচ্চিত্রের জন্য হয়ে ওঠে চলচ্চিত্র নির্মাণের থিম (বিষয় নির্ধারণের জন্য) উৎস।
লোকবিশ্বাস রয়েছে ভ্যাম্পায়ার এবং ওয়্যারউলভসে (যে ব্যক্তি পূর্ণ চাদে চিতা বাঘে রূপান্তরিত হতে পারে) , এই ধারণা ব্যবহার করা হয় প্রতিটি হরর (ভৌতিক) চলচ্চিত্রে। ফোকলোরের নায়করা এবং গল্পের প্লট তৈরিতে কিংবা বই থেকে অভিযোজিত করে চিত্রনাট্যকার, চলচ্চিত্র যেমন দ্য নেভার-ইন্ডিং স্টোরি (১৯৮৪) , দ্য প্রিন্সেস ব্রাইড (১৯৮৭) এবং ফ্রাইডে দ্য থার্টিন (১৯৮০)। অন্যান্য জনপ্রিয় দৃশ্যকাব্য সংস্কৃতির আঙ্গিক নির্দিষ্ট করে বলে, যেমন- ‘‘দ্য কোয়েস্ট’’, ‘‘জার্নি’’ অথবা ‘‘অ্যাডভেচার’’ এর কাহিনি নেওয়া হয়েছে লোককথা কিংবা মহাকাব্য থেকে, যেগুলোকে ভিডিও এবং কম্পিউটার গেমসে রূপান্তরিত করা হয়। ভিডিও ক্যামেরা, মুভি ক্যামেরার আগে থেকেই মানুষের লাইভ ডক্যুমেন্টারি করার কাজ কে পাল্টিয়ে দেয়।
সংক্ষেপে বলা যায়, চলচ্চিত্র নির্মাতাগণ এবং চিত্রগ্রাহকগণ নির্ধারণ করে রেকর্ড করে কোনটি পেশাগত চলচ্চিত্র হবে কিংবা পারিবারিক চলচ্চিত্র হবে অথবা সাধারণ ভিডিও হবে তার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয় এতে আসলে কি দেখানো হবে, যেমন এতে থাকে জীবনের কেন্দ্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি, যেমন এতে থাকে একগুচ্ছ আচারিক বিষয় (জন্মদিন, বারের আচার, স্নাতক ডিগ্রী প্রদানের অনুষ্ঠানের রীতি, বিবাহোৎসব), বর্ষপুঞ্জি এবং ধর্মীয়ে ছুটির দিন (ক্রিসমাস, পাস ওভার (ইহুদিদের বাৎসরিক পর্ব বিশেষ), মারি গ্রাস (নিউ ওরলেনসের একধরনের উৎসব)); এবং পরিবেশনামূলক মুহূর্ত (শিশুদের খেলা-ধুলা এবং জাতিগত উৎসব)। ফোকলোরিক চলচ্চিত্রে লোক শিল্পীদের আলাদা আলাদা ভাবে ডক্যুমেন্টেড করা হয় অনেকটা ঐতিহ্যবাহী প্রথা অনুসারেরই তাদের যুক্ত করা হয় (যেমন, কাজের ভিতর , লোকগান গাওয়ারত অবস্থায়, লোকশিল্প তৈরিরত অবস্থায়। এই ধরনের বিষয় থেকে মূল যে বয়ান পাওয়া যায় তা আসলে ফোকলোরিক চলচ্চিত্র এবং ফোকলোরিক ভিডিও, যেটি নির্মিত হয় নিত্য দিনের সাধারণ কর্মকা- থেকে, এই চলচ্চিত্রগুলোতে তুলে ধরা হয় জীবনের নানান ঘটনা এবং কার্যক্রমের বিশ্লেষণ।
অনুবাদক: শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।