আঁকশিকথন

বিবর্তিত হচ্ছে সময়, সংস্কৃতি, প্রাণ, প্রকৃতি। মুদ্রণালয়ের দরজায় দাঁড়াবার আগেই প্রযুক্তি হাতের মুঠোয় ধরা দেয়। আঙুলের স্পর্শে এখন নিযুত মহাফেজখানা। সেই সাহিত্য দর্পণে নিজেই নিজেকে দেখি। এই আন্তর্জালিক সাহিত্য সৃজন সময়ের সাথে ধাবমান । তার জঠর থেকেই আঁকশি‌’র জন্ম। এই উঠানের ভাব ও রসের সৃজন বৃক্ষে চিত্ত চৈতন্যের ফুল-ফল উঁকি দেয় অহর্নিশি।

মানব মগজ বিস্ময়কর। যেখানে কল্পনার তড়িৎ প্রবাহে নিয়ত উপ্ত হয় সৃজনের অতীন্দ্রিয় বীজ। মননের অঙ্কুরে জন্ম নেয় ফুল, ফল, ফসল। সেই মগজের পুষ্ট প্রসূন ছিঁড়ে আনে আঁকশি।

শ্রাবণ, অগ্রহায়ণ আর চৈত্র বছরে এই তিনটি সংখ্যা বের করার প্রত্যয় নিয়ে আঁকশির যাত্রা।  

ভাদ্র সংখ্যা ১৪২৮ সম্পাদকীয়    

মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। মনন বিনির্মাণে শিক্ষার ভূমিকা অনস্বীকার্য একথা স্বীকার না করলে মুখস্থবিদ্যা বড়োই অপমানিত হয়! অনস্বীকার্য এই শিক্ষা কারখানার মূল রসদগুলোর উৎস কী? পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং প্রতিষ্ঠানই মূলত শিক্ষা-রসদের মূল উৎসমুখ। কিন্তু প্রথম উৎসমুখে যে বড়সড় একটা বাঁধ জমেছে তা বালকের পক্ষেও বোঝা সহজ। আর দ্বিতীয় মুখ নিয়ে বড়োমুখ করে বলার মতো বাস্তবিক কোন কারণ আছে কিনা তা খুঁজতেও অণুবীক্ষণযন্ত্রের প্রয়োজন। শিক্ষা কী তা শেখাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তেমন কোন মাথাব্যথা নেই! অন্ধের ষষ্ঠী এই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা-সূর্যটিও গত দেড়বছরাধিক প্রকৃতির আড়ালে মুখ লুকিয়ে বসে আছে। এযেন ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’! এদিকে দিনে দিনে সনদ সন্ধানীদের দীর্ঘশ্বাসে ভারী হচ্ছে করোনাক্রান্ত আকাশ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তবে আশার কথা হল এই প্রতিবাদী করোনাকাশে সম্প্রতি প্রতিভাত হচ্ছে ঊষালগ্ন। আলো ছড়িয়ে পড়বে, ধুলো-ময়লা ধুয়েমুছে প্রতিক্ষীত শিক্ষা-সূর্যটি স্বচ্ছ হয়ে ধরায় ধরা দেবে সেই প্রত্যাশা আমাদের।

‘আঁকশি ই-ম্যাগাজিন’ একটি শিক্ষানুকূল পরিবেশ সৃষ্টির প্রতীতি নিয়ে যাত্রারম্ভ করেছে ১৪২৭-এ শ্রাবণ সংখ্যা প্রকাশের মধ্য দিয়ে। লেখকের মনন-সৃষ্ট নান্দনিক চিন্তা-নির্যাসটুকু পাঠকের সামনে পরিবেশনের দায়িত্ব নিয়ে যাত্রা শুরু করা ‘আঁকশি ই-ম্যাগাজিন’ প্রথম বর্ষে প্রকাশ করেছে তিনটি সংখ্যা। দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পন করা ই-ম্যাগাজিনটি এবার প্রকাশ করছে ‘দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সংখ্যা’, ভাদ্র সংখ্যা ১৪২৮। এ সংখ্যায় যাঁদের চিন্তা-শ্রমে পুষ্টি পেল আঁকশি-দেহ তাঁদের প্রতি রইল অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা।  

শেখ সুজন আলী

সম্পাদক, আঁকশি ই-ম্যাগাজিন

চৈত্র সংখ্যা ১৪২৭ সম্পাদকীয় 

২০২১ সন, চলছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। সে উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণে কদিন আগে বাংলাদেশ সফর করে গেলেন ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে কেবল ভারতেই নয়, গোটা দুনিয়ার অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার মানুষকে আশাহত করেছে। নানা সম্প্রদায়ের সমন্বয়ে গঠিত ভারত রাষ্ট্রের আসল সৌন্দর্যই হবে অসাম্প্রদায়িকতা এমনটাই প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের। বিজেপি নেতা নরন্দ্র মোদীর গত কয়েকবছরের কর্ম-পরিকল্পনা প্রগতিশীলদের সন্দিহান করে তুলেছে। দানা বেঁধেছে অসন্তোষ, ভারতীয় ঐতিহ্যে বিশ্বাসী সাধারণ মানুষের মধ্যেও।  

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরোধিতায় বাংলাদেশে উদ্ভব হয়েছে নাশকতার; ঘটেছে বিক্ষোভ মিছিল, মন্দিরে হামলা, অগ্নিসংযোগ, হরতাল এমনকি প্রাণহানির মতো ঘটনাও। হেফাজতে ইসলাম নামের ধর্মীয় সংগঠনের নানামুখী বিরোধিতা বেশ শক্তহাতে সামলাতে হয়েছে বাংলাদেশের সরকারকে। জানা গেছে তাদের বিরোধিতার কারণ ছিল ইসলাম বিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক মোদী। তবে বিরোধিতা করার মূল উদ্দেশ্য যে অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠা করা, সংগঠনটির কর্ম-জঠর থেকে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সঙ্গত কারণেই সে বিশ্বাস জন্ম নেয়নি। উল্টো এই জিজ্ঞাসা সাধারণের মনে, অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠার ছায়ায়, এই প্রবণতা, সাম্প্রদায়িকতা লালন করা নয় তো!

এরকমই নানাবিধ ঘটনা পরম্পরার মধ্যে দিয়েই নির্মিত হচ্ছে আমাদের উপমহাদেশের আগামীর কন্টকাকীর্ণ পথ। মনে হয়, আমরা যেন রাশি রাশি ঘৃণা আর ব্যাধি নিয়ে আমাদের সন্তানদের জন্য তৈরি করছি এক অরক্ষিত নৃশংস ভবিষ্যত। অথচ এই উপমহাদেশে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা সমগ্র নিপীড়িত মানুষের সামনে একটি মানবিক ও নিরপেক্ষ রাষ্ট্রাদর্শ নির্মাণের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে প্রতিভাত হয়েছিল। আমাদের লড়াই এখনও শেষ হয়নি।

এই প্রতিকূল সময়ে, আঁকশি চৈত্র সংখ্যা ১৪২৭ প্রকাশিত হল। বাংলার প্রকৃত প্রকৃতি, সহনশীল মৃত্তিকা ও প্রেম-প্রীতি-প্রতিবাদময় বুদ্ধিবৃত্তিক জলধি বিনির্মাণে এই নবপ্রকাশ একবিন্দু জলও যদি যোগ করতে পারে, আমাদের সংগ্রাম এগিয়ে যাবে।          

শেখ সুজন আলী

সম্পাদক, আঁকশি ই-ম্যাগাজিন।

অগ্রহায়ণ সংখ্যা ১৪২৭ সম্পাদকীয়

বাংলাদেশ― ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের এক নৈসর্গিক সৌন্দর্য সজ্জিত ভূখণ্ড। এই অপরূপ ভূখণ্ড-সংস্কৃতির সন্তান আমরা। আমরা লুঙ্গি শাড়ি পরি, সকালে মরিচ-পেঁয়াজ দিয়ে পান্তা খাই, কাস্তে কোদাল হাতে মাঠে যাই, পথে ঘাটে একতারা বাজাই, ডাহুক ফিঙে ঘুড়ি উড়াই, ক্ষেতে খামারে কাক তাড়ুয়া রাখি, মাঠে মোড়ে ভাস্কর্য বসাই।

২০২০ সাল। এদেশের মানুষ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে। ঠিক এই সময় তাঁর ভাস্কর্য ভাঙছে, ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছে এক শ্রেণির মানুষ। তাদের এ বিরোধিতা যেন এদেশের স্বাধীনতার চেতনাকে অস্বীকার করা। তারা আমাদের সংস্কৃতির মূলে আঘাত হানতে চাইছে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে আবার সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে ফিরিয়ে নিতে চাইছে। স্বাধীনতার প্রায় অর্ধ শতাব্দি পরে তাদের এ দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, অন্যায্য এবং অন্যায়।  

 এদেশ কীভাবে চলবে, কোন আদর্শে চলবে সে আলোচনা হয়ে গেছে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ সাল সময়ের মধ্যে এবং ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যমে তা হয়েছে মীমাংসিত এবং সুপ্রতিষ্ঠিত । ২০২০ সালে এসে এর ব্যতিক্রম কোন কিছু ভাবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী এবং দেশদ্রোহিতার সামিল।

অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং দেশীয় সংস্কৃতির ধারণা দেশের বর্তমান প্রজন্মের আত্মায় প্রোথিত করার দায়িত্ব বর্তমান শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী সমাজকেই নিতে হবে; শেখাতে হবে মানুষকে মানুষ হিসেবে ভাবাতে।

‘অগ্রহায়ণ সংখ্যা ১৪২৭’ আঁকশি ই-ম্যাগাজিন এর দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশ হল এ বছরে। যাঁদের লেখায় আঁকশি’র গায়ে যুক্ত হল আরেকটি পালক তাঁদের অশেষ ধন্যবাদ। ধন্যবাদ সকল আঁকশি সম্পাদনা সারথিকে।

শেখ সুজন আলী

সম্পাদক, আঁকশি ই-ম্যাগাজিন।

শ্রাবণ সংখ্যা ১৪২৭ সম্পাদকীয়

তা প্রায় বছর দুয়েক আগে, একটা ভাবনা-বীজ উপ্ত হয়েছিল হৃদয়-ভূমে। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো সেটা অঙ্কুরিত হয়নি এই দীর্ঘ সময়েও। হয়তো অঙ্কুরোদ্গম-উপযুক্ত পরিবেশ পায়নি। প্রয়োজনীয় আলো, জল পেলেও পায়নি পর্যাপ্ত হাওয়া। ব্যস্ততা-পাহাড় বোধ করি স্থায়ী আবাস গেড়েছিল হাওয়ার উৎসমুখে। ভাবনায় রসদ জোগান দাতা কয়েকজন প্রিয় সহযাত্রীদের এ নিয়ে অতৃপ্তির অন্ত ছিল না। তবে বীজটিকে শুকিয়ে যেতে দেইনি, আমরা কেউ-ই। মাটি ও বীজ উভয়ের পরিচর্যা করে গেছি নিয়মিত-ই। অবশেষে করোনাকালে প্রকৃতি যখন হাসতে শুরু করল তখন খেয়াল করলাম হাওয়া-মুখের এ পাহাড় তো পাথরের নয় এ তো বরফের! এবং সে বরফ গলতে থাকল আর আমাদের হৃদয়-ক্ষেতটি পেল ঝিরিঝিরি নির্মল হাওয়া। আমাদের সেই উপ্ত বীজটি তরতর করে অঙ্কুরিত হলো সতেজ সবুজ পাতা মেলে, ’আঁকশি’ নামে।

লেখকের মনন-সৃষ্ট নান্দনিক চিন্তা-নির্যাসটুকু ‘আঁকশি’ থালায় সাজিয়ে পাঠকের সামনে পরিবেশনের দায়িত্ব নিয়ে প্রকাশিত হলো ‘আঁকশি ই-ম্যাগাজিন’ প্রথম সংখ্যা, ‘শ্রাবণ সংখ্যা ১৪২৭’। যে সকল চিন্তা-শ্রমিকের শব্দালংকারে অলংকৃত হলো প্রথম সংখ্যা তাঁদের শ্রদ্ধাভরে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে আঁকশি ই-ম্যাগাজিন। প্রথম সংখ্যাটিকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তোলার জন্যে সকল সম্পাদনা সারথিকে জানাচ্ছি অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

শেখ সুজন আলী

সম্পাদক, আঁকশি ই-ম্যাগাজিন