মুঈন হুদা’র দুটি কবিতা

1

ছবি: এ এইচ এম কামাল

কবিতা ছেড়ে গেছে আমায়

চারিদিকে কেবলই এক ভয় আতঙ্ক-
সময়ের চোরাবালিতে ঘুরপাক সবার;
কবিরা তবু পূর্ণ প্রাণশক্তি ঢেলে
লিখছে কবিতা, জীবনের গান ধুন্ধুমার।
অথচ ভালোলাগা প্রিয় কবিতায় এখন-
কেন যেন কোনই টান নেই আমার;
দূরে বহুদূরে নির্বাসনে চলে গেছে সে আজ।
 
শেষ দেখা হয়েছিল যখন যদিও সব মনে নেই-
তবু মনে পড়ে খুব করে কেঁদেছিল সে;
চিরচেনা ভালোলাগা হাসি ছিল না তার
ছিল না পাহাড়, নদী, নীল আকাশ উদার;
কষ্টের কালো দাগে ছিল আচ্ছন্ন সমস্ত ক্যানভাস।
শুধু হৃদয় বিদীর্ণ করা আবেগী কান্না
বুকের পলল জমিনে ছিল বেদনার অশ্রুপাত;
খুবই সামান্য ছিল তার চাওয়া-
ব্রহ্মপুত্র পাড়ে জৈষ্ঠ্যের খররোদে গাছের ছায়ায়
নিরিবিলি বসে থাকা, পলিভরা টলমল জল গায়ে মাখা!
 
জানি, এ খুব বড় কিছু চাওয়া নয়-
হাজার নদী ঘেরা দেশে; যেখানে
তিস্তা, ধরলা, সোমেশ্বরী, ম্রিয়মান লৌহজং ছুঁয়ে
নীল জল মেঘনার বুকে হাহাকার তোলে।
তবু হলো না তার সেই আকাঙ্ক্ষার যবনিকা পতন;
চারিদিকে কেবল নীল জল সমুদ্র অসহায় ক্রন্দন।
প্রিয় বাংলাদেশ সুখে নেই, কবিতা ছেড়ে গেছে আমায়।।
 
 
করোনাকাল এবং তোমার প্রিয়মুখ

দেখো, পৃথিবীর তাবৎ মানুষের মাঝে -
প্রচণ্ড রকম বাঁচার আকুতি;
জীবন এখানে মূল্যবান অনেক।
কিন্তু কেন?
তা কি- তোমার আমার আমাদের মধ্যে যে অপূর্ণ প্রেম 
তার পূর্ণতা দেয়ার জন্য;
নাকি ভালোবাসাহীন সংসারে জন্ম নেয়া শিশুর
ভবিষ্যৎ সুখ স্বাচ্ছন্দ নিশ্চিত করে যাবার জন্য;
নাকি জন্মাবধি ভেতর সত্ত্বায় লালিত স্বপ্ন পূরণের জন্য?
এই অতিমারী অবলম্বনহীন করোনার সময়ে
কেহ যদি ফুসফুসের অক্ষমতাজনিত কারণে
সামান্য কৃত্রিম অক্সিজেনের অভাবে মারা যায়-
তবে কি তার- সবই নিশ্চিত ব্যর্থ হয়ে যাবে?
আর যদি সব ব্যর্থ হয়েই যায়-
তাহলে কি তার অশরীরি আত্মা
চিতার গনগনে আগুনে পুড়ে কষ্ট পাবে অনন্তকাল?

এই যে বললাম অশরীরি আত্মা-
তা আসলে কী, কী-ই বা তার স্বরূপ;
প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তিতে কী হয় তার অনুভূতি?
দমহীন ঘড়ির মতো জীবন থেমে গেলে
দেখো, আত্মাহীন অসাড় শরীর-
কত দ্রুত চলে যায় পোকার দখলে;
অথচ মিহি কালো শাড়ীর আঁচলে ঢাকা
তোমার প্রিয়মুখ আমার কত না আপন!

লেখক: কবি ও শিক্ষক, ময়মনসিংহ।
  

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম দিন