ভ্রমণ সাহিত্য : বঙ্গবন্ধু এডভেঞ্চার ফেস্ট ২০২০: সানিয়াত তূর্য্য

0

ছবি: সোহেল রানা

রাত এগারোটায় জার্নি শুরু হল এক নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে। এর আগে আমি কখনও কোন লাক্সারিয়াস বাসে এতোদূর জার্নি করিনি। দেড়টায় কুমিল্লায় স্টপেজ হল। তবে আমি নামলাম না। জীবনে বহুবার কুমিল্লা হয়ে চট্টগ্রাম যাওয়া আসা হয়েছে। এই প্রথম কুমিল্লায় নেমে মূত্রবিসর্জন করিনি।

সকাল সাড়ে চারটায় বাস চলে এল কাপ্তাই। আরও ঘন্টাখানেক পর আমাদের গন্তব্য শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে এসে নামলাম। নেমেই দেখি সারি সারি তাবু। কুয়াশার পেছনে আবছা পাহাড় আর সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গোটা দশেক তাবু দেখে আমরা মোহিত হয়ে গেলাম। জানলাম, সামনে লেক। আমি আর নিকসেঙ লেকের পাড়ে এসে দিশেহারা হয়ে গেলাম। লেকের উপর কুয়াশা ভেসে বেড়াচ্ছে আর স্থবির হয়ে আছে নৌকা এবং সময়। ঝটপট কিছু ছবি তুলতে না তুলতেই ডাক পড়ল। তুলতে পারলাম না সবচে’ আকাঙ্ক্ষিত ছবিটাই।

উপরে উঠতেই অনুমতি ছাড়া লেকের পাড়ে চলে আসার জন্য পানিশমেন্ট হিসেবে মাঠের এপার থেকে ওপার ফ্রগজাম্প দিয়ে শুরু করলাম বঙ্গবন্ধু ন্যাশনাল এডভেঞ্চার ফেস্ট ২০২০।

দাঁত ব্রাশ করার পারমিশন নিয়ে আবারও লেকের পাড়ে এসে ক্যামেরা বের করতে করতে দেখি বহুল আকাঙ্ক্ষিত দৃশ্যটি আর নেই। এক বুক আপসোস নিয়ে হাত মুখ ধুয়ে উপরে উঠে বাজারে গিয়ে সকালের নাস্তা সারলাম। তেরোজন মিলে কখন কীভাবে গোটা ষাটেক রুটি সেঁটে দিয়েছি টেরও পাইনি।

নাস্তা শেষে নৌকার সন্ধানে বাজার থেকে লেকের পাড়ে এসে আরও একবার বিমোহিত হলাম। প্রচণ্ড বাতাসে লেকের উপর ভেসে থাকা কুয়াশা আমাদের ছুঁয়ে যাচ্ছে। যেন এক টাইম ল্যাপসের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে।

নৌকা না পেয়ে উপরে উঠে দেখি কোথাও কেউ নেই। ট্যুরে আমার জুতোর কপাল বরাবরই খারাপ। একশো বিশ টাকার স্যান্ডেল কিনে মেইন রোডে উঠেই দৌড় দিলাম। আবারও ইন টাইম ব্যাক করতে না পারায় শাস্তির ভয়ে অনেকদিন পর ফ্রগ জাম্প দেয়া ক্লান্ত উরু নিয়েই দৌড়ে স্টেডিয়ামে ফিরতে পথে বড় ভাইদের সাথে দেখা, চা খেয়ে ফিরে একটু রেস্ট নিলাম।

দিন বাড়ার সাথে সাথে ঘন কুয়াশা কেটে রোদ ফুটলে সিদ্ধান্ত নিলাম কাপ্তাইয়ে গোসল করব। আজম ভাই ঘোষণা দিলেন যত এএম এ গোসল করব, তত পিএম এও আমাদের পানিতে চুবাবেন। মানে যদি সকাল দশটায় গোসল করি তবে রাত দশটায়ও নামতে হবে। তাই বুদ্ধি করে বারোটায় গোসলে নামলাম।

কাপ্তাইয়ের স্ফটিকস্বচ্ছ বরফঠান্ডা পানি। বছরের প্রথম গোসল বোধ করি এরচে’ ভালোভাবে হতো না। মেলাদিন পর মেলাক্ষণ ধরে পানিতে ঝাঁপাঝাপি, সাঁতার। পানি এতো স্বচ্ছ যে পানিতে লাফিয়ে পড়ার পর যদি আমার প্যান্ট খুলে যেত তবে পাড়ে বসেই সবকিছু দেখে ফেলা যেত। দশ পনেরো মিনিট লাফালাফি করে রোদ তাপানোর সময় জিহাদ ভাই আর তারও একটু পরে হৃদয় ভাই এসে আমাদের সাথে যোগ দিলেন। অগত্যা আমাদের আবারও পানিতে নামতে হল।

গোসল করে উঠে এসে কিছু চমৎকার ছবি তুলে ফেললাম। এত নির্মল পরিবেশ, এত সুন্দর রঙ দেখে আমার আবেগে নাকে প্রায় সর্দি চলে এসেছিল। এর মাঝে স্থানীয় প্রশাসনের লোকজন এলে শিহাব ভাই তাদের ব্রিফ করলেন।

ক্যাম্প সাইটে এসে হালকা ক্রিকেট খেলতে না খেলতেই খাবারের ডাক এল। লাল শাক, আগুন গরম সবজি আর দেশি মুরগির কড়া ঝোল আর শসা টমেটোর সালাদ দিয়ে উদরপূর্তির আয়োজন। প্লেট সংকট থাকায় সিনিয়ররা আমাদের পরে খাবেন বলে ঠিক করলেন। আমি পড়লাম বেজায় সংকটে। আমার খেতে সময় লাগে। প্রত্যেকটা দানা চিবিয়ে তার স্বাদ নিয়ে তবেই খাই। ক্ষুধা আর খাদ্যের স্বাদ আমাকে খাওয়া ছেড়ে উঠতে দিচ্ছিল না। আবার লিডারের না খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকাটাও মোরালিটিতে আঘাত করছিল। শেষ পর্যন্ত আর থাকতে না পেরে প্লেট নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় প্রস্থ ভাত আর তরকারি এনে আয়েশ করে খেলাম।

খাবার পর্ব শেষে প্লেট ধুয়ে এসে সবাই মিলে বাজারে এসে ঘোরাঘুরি করলাম। রাজন ভাই ফ্ল্যাগ সেলাই করাতে দিলেন। সেলাই শেষে আখ চিবোতে চিবোতে নিকসেঙ আখ খেতে পারে না শুনে অবাক হতে হতে ক্যাম্পে ফিরলাম। আগামীকাল বা পরশু পূর্ণচন্দ্র। শাওন ভাই রাগবি আকৃতির চাঁদটা নিয়ে ঠিক কারা খেলাধুলা করছে এ নিয়ে কিছুক্ষণ গবেষণা করলেন।

রাতে সবজি, গরুর মাংস আর ডাল দিয়ে পেটপুরে খেয়েদেয়ে বিপ্লবদা ঢোল, জিপসি আর মন্দিরা নিয়ে বসে হেঁড়ে গলায় চিল্লাপাল্লা শুরু করলেন। ঘুমাতে এসে দেখি কম্বল নেই। মেলা কেচ্ছা কাহিনী করে কম্বল এনে শুয়েই আজম ভাই আর জিহাদ ভাই ঘুমিয়ে গেলেন এবং ঘুমন্ত অবস্থায় নাসারন্ধ্র দিয়ে কথা বলতে (পড়ুন নাক ডাকতে) শুরু করলেন। সম্ভবত স্বপ্নে কোন ব্যাপারে তাদের বনিবনা হচ্ছিল না। তাই এক পর্যায়ে তারা ঝগড়া শুরু করলেন। একজন তীব্র গতিতে নাক ডাকেন তো আরেকজন ততোধিক উঁচু গলায় (পড়ুন নাকে) তার উত্তর দেন। তাদের নাক ডাকাডাকিতে আমরা অস্থির হয়ে মধ্যরাতের পরে অবশেষে ঘুমোতে পারলাম।

বাংলাদেশ এডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের সাথে এই ছিল আমার প্রথম দিন।

সকালে পাহাড়ের উপর থেকে সূর্যরশ্মি এসে পানিতে প্রতিফলিত হয়ে হাজার লক্ষ তারা জ্বলজ্বল করতে থাকে। ছোট মাছধরা নৌকা থেকে শুরু করে বড় বড় ট্রলার ভেসে বেড়ায় সেই তারার পুঞ্জে। তাঁবু খাটানো আর স্টেজের ফুটেজ নিয়ে আশেপাশেই এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে ফিরি। যেদিকে তাকাই, যা-ই দেখি, অনিন্দ্যসুন্দর লাগে। সাধারণত দেশকে মায়ের সাথে তুলনা করা হয়। কেন তুলনা করা হয় তা এই অপরূপ রূপের দিকে তাকালেই টের পাওয়া যায়।

সারাদিন তেমন কোন কাজ নেই। ক্রিকেট খেললাম। সবাই মিলে বাজারে ঘুরে আসলাম। রাতের খাবার খেয়ে আবার শুরু হল খেলাধুলা। এলোন্ডি লন্ডন দিয়ে শুরু করে কানচুপি খেলে বারোটায় গাট্টি বোঁচকা নিয়ে রওনা হলাম কলেজ ছাত্রাবাসের দিকে। দুইজন নতুন অতিথি আসায় আমাদের জায়গা বদলাতে হল।

রাতে একটা অসাধারণ স্বপ্ন দেখে সকালে ঘুম থেকে উঠেই হুলুস্থুল। খুব সকালেই পার্টিসিপ্যান্টদের একটা টিম চলে এল সুদূর ইন্ডিয়া থেকে। ক্ষানিক বাদে আরও কিছু পার্টিসিপ্যান্ট চলে এল। নেপাল থেকে একটা টিম এসেছে বাঞ্জি রেকি করার জন্য। শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের ছোট্ট মাঠটা আর বড় বড় তাঁবু গুলো মুহুর্তেই জমজমাট হয়ে গেল। ইন্ডিয়ান পার্টিসিপ্যান্টরা ফ্যারফ্যার করে হিন্দি বলেন। শুনতে মধুর লাগে। ভলান্টিয়াররাও তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে হিন্দিতে কথা বলতে থাকলেন।

হাতমুখ ধুয়ে বাজারে এসে আলুভর্তা আর ভাত খেতে খেতে মৌ আপু, তার দুই বন্ধু আর তূর্ণা এবং একটা বেঢপ লাগেজ এসে জুটল। লাগেজে করে য়্যুনিভার্সিটির জুনিয়র তূর্ণা শাড়ি এনেছে ইদানিংকার ট্রেন্ড অনুযায়ী পাহাড়ে শাড়ি পরে ছবি তুলতে।

ওয়েট হোয়াট! এডভেঞ্চার ফেস্টে শাড়ি!

নূর ভাইয়ের ফ্রিসবি দিয়ে এমদাদ ভাই আর আমি খেলছি। এক পার্টিসিপ্যান্ট এসে একবার থ্রো করার আবদার করলো। তার হাতে ফ্রিসবি দিতেই এক থ্রোতে ফ্রিসবি মেরে স্টেজের প্যান্ডেলের উপর নিয়ে ফেললো। এমদাদ ভাই কোত্থেকে ইয়া লম্বা এক বাঁশ নিয়ে এলেন। কিন্তু আমরা কিছুতেই কিছু করতে পারছিলাম না। হঠাৎ জিহাদ ভাইয়ের আগমন ঘটল। পেশির যাদুতে ফ্রিসবি নামিয়ে দিতেই আবারও খেলায় মজে গেলাম আমরা।

বিকেলে মশিউর ভাই ভলান্টিয়ারদের ব্রিফ করার পরপরই কাজে নেমে পড়লাম। রেজিস্ট্রেশন প্রসেস, পার্টিসিপ্যান্টদের কিট বুঝে পাওয়ার ফুটেজ, ছবি নিয়ে নদীর পাড়ে গেছি একটু রিলাক্স করতে। নদীর পাড়ে কিছু লোকাল ছেলেরা বসে আছে। তাদের ব্লুটুথ স্পিকারে চমৎকার গান বাজছে। তাদের মধ্যে একজন এসে পরিচয় দিয়ে কথা বলা শুরু করল। পরবর্তী ঘন্টাখানেক আমরা পরম পরাক্রমশালী সৃষ্টিকর্তার লীলা-লাস্যে অভিভূত হয়ে গেলাম। হুট করেই দুর্দান্ত কিছু মানুষের সাথে অবিস্মরণীয় কিছু স্মৃতি রেখে গেলাম কর্ণফুলীর এক পূর্ণচন্দ্রের রাতে।

এরপর ইভান ভাইয়ের সাথে বাজারে গিয়ে ক্ষুধা (!) নিবারণে পেটপুরে ডিমচপ, পুরি, চা, টা খেয়ে আবারও সৃষ্টিকর্তার শোকরানা আদায় করে করে ক্যাম্পে ফিরে এলাম। পার্টিসিপ্যান্টদের বেসিক ইনষ্ট্রাকশন দিয়ে দিলেন ট্রেইনাররা। এবং এরই সাথে হাজার ক্যালরি খরচ করা বাইশ কিলোমিটার হাঁটা দৌড়ানো একটা দিন শেষ হল।

১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভোরে ঘুম ভেঙে গেলেও কম্বলের নিচ থেকে বের হতে একদমই ইচ্ছে করছিল না। মূত্রচাপে ব্লাডার ফেটে যাবে যাবে মুহুর্তে উঠতেই হল। খুব কষ্টে উঠে তাঁবু থেকে বের হয়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে দিতে আরও একবার কর্ণফুলীর কুয়াশার রূপ দেখে বিমোহিত হয়ে গেলাম। জীবনে প্রথম কেন আমি লম্বা সময় ধরে হিসু করতে পারি না তার জন্য একটু আপসোস করলাম। তাঁবুতে ঢুকে আবারও কম্বলের নিচে। ইভান ভাই ঘুম থেকে উঠে পড়তে তোরজোর শুরু করল। অনেক কষ্টে তাকে ম্যানেজ করে আরও পাঁচ মিনিট সময় নিতে না নিতেই হৃদয় ভাই এসে কম্বল ধরে টান দিলেন। মুহুর্তে মেজাজ বিগড়ে গেল। সেই রাগে নদীর ধারে এসে কিছুক্ষণ বসে কর্ণফুলী, তার উপরের কুয়াশা আর তার ওপারের পাহাড় দেখে মন ভাল করে ফিরে এসে সকালের খাবার খেয়ে ক্যামেরা গুছিয়ে চলে এলাম কর্ণফুলী সরকারি কলেজ ময়দানে। আজকে বঙ্গবন্ধু ন্যাশনাল এডভেঞ্চার ফেস্ট ২০২০-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন।

মাননীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এসেছেন, এসেছেন একজন ফ্রেঞ্চ মেরিনারসহ আরও অনেক গুণী মানুষ।

বড় বড় প্রোগ্রামে সাধারণত ফটোগ্রাফারদের ভিড়ে ছবি তুলতে হয়। আমার শরীর বড় তাই ধাক্কাধাক্কিতে আমার একটা বড় এডভান্টেজ থাকে। যদিও আমি কখনই সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করি না (নিতান্ত বাধ্য না হলে)। তাই বরাবরের মতই যে ছবি তুলছে তার পেছনে দাঁড়িয়ে তাকে বললাম তার শেষ হলে যেন সরে যায়। হঠাৎ পেছনে কয়েকজন লোকাল সাংবাদিক খুব হাউকাউ শুরু করলেন। আমাদের সরতে বলছেন। তাদের হম্বিতম্বি দেখে ক্ষানিকক্ষণের জন্য দ্বিধায় পড়ে গেলাম। তাদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হল আমরা নিতান্তই কৌতূহলী জনতা তাদের লাইভ টেলিকাস্টে বাগড়া দিচ্ছি। এ নিয়ে পরবর্তীতে অনেক-দূর জল গড়িয়েছে। এটা নিয়ে লিখে লেখার মজাটা নষ্ট করতে চাচ্ছি না।

বিকেলে টি ট্রেইল ট্রেকিং হল। ওয়াক্কানিপাড়া টি স্টেট থেকে ট্রেকিং শেষে হালকা নাশতা ও তাজা চা-পাতার চা খেলাম।

পরদিন কায়াকিং ডে। ভোরের এক্সারসাইজ হল কর্ণফুলীর তীরে। খুবই উপভোগ্য একটা এক্সারসাইজ সেশন শেষ করে ব্রেকফাস্ট হিসেবে একটা প্যাকেটে একটা বন, একটা ডিম, একটা কলা এবং পলিব্যাগে মোড়ানো একটু অরেঞ্জ জ্যাম। অপু ভাইয়ের এন্টিকাটার নিয়ে বন দুই ভাগ করে তারমধ্যে কলা আর ডিম কুঁচিকুঁচি করে কেটে চমৎকার একটা বার্গার দিয়ে সকালের নাশতা করে গাড়িতে উঠে পড়তে হল। গন্তব্য তবলছড়ি। উন্নয়ন বোর্ড পেরিয়ে শহীদ মিনারের পেছনের ঘাট দিয়ে নেমে কায়াকিং। ঘোরাঘুরি হল, রেস হল। শিহাব ভাই বুকে গো প্রো সেট করে দিলে আমরা কায়াক নিয়ে বের হলাম। কাপ্তাইয়ের মাঝে ভর দুপুরের উজ্জ্বল রোদে ভেসে বেড়ানো মনে থাকবে বহুদিন।

কায়াকিং শেষ করে পানিতে নামব। বুকে শিহাব ভাইয়ের গো প্রো ব্ল্যাক আট। লাফিয়ে নামতেই চোখ থেকে চশমা ছুটে গেল। পানি এতো স্বচ্ছ যে চশমাটা তলিয়ে যাচ্ছে সেটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। হাঁচড়েপাঁচড়ে চারবারের বার চশমাটা ধরতে পারলাম। লাইফ জ্যাকেট থাকায় ডুবও দিতে পারতাম না। শেষ বার ধরতে না পারলে চশমাটাই যেত। পানিতে এই প্রথম কোন ক্যামেরা নিয়ে নামা। কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না একেবারেই। মনে হচ্ছে ছবি নিই, মনে হচ্ছে ফুটেজ নিই। শাওন ভাই আর এক্স জিহাদ ভাই এলেন পানির নিচে ছবি তুলতে। আমি তাদের ছবির বদলে ফুটেজ নিলাম। হঠাৎ শুনি কার হাত থেকে মাউন্ট করা একশন ক্যাম স্ক্রু খুলে পানিতে পড়ে গেছে। তাকিয়ে দেখি বেচারা হাতে মাউন্ট নিয়ে দুঃখি চোখে পানির দিকে তাকিয়ে আছে। কাপ্তাইয়ের অভিশপ্ত রাক্ষসী এক পার্টিসিপ্যান্টের গো প্রো সেভেন তার পেটে পুরে নিল। কী সুস্বাদু ট্রিটটাই না পেল!

ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল তাই খাবার আসতে দেরি হচ্ছিল। আর তাই কাপ্তাইয়ের সীমাহীন নীল রঙটা দেখতে দেখতে চোখ খুন করার পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাচ্ছিল। খাবার আসার আগমুহূর্তে মেরিনা নিকসেঙকে নিয়ে রওনা হলো বনরূপা’র দিকে। উদ্দেশ্য নাপ্পি পেলে কিনে আনা। একটা রেস্টুরেন্টে কাঁচা টমেটোর নাপ্পি পাওয়া গেল।

তবলছড়ি থেকে ফিরতে দেরি হয়ে যাওয়ায় বিকেলের রোপ কোর্স পিছিয়ে পরদিন সকাল ছয়টায় নিয়ে যাওয়া হল।

সন্ধ্যে থেকে কারুরই কিছু করার ছিল না। এমনিতেই নিকসেঙ আর আমি একটা গীটার বা একটা ইউকুলেলে চরম মিস করছিলাম। বিপ্লব দা’র ঢোল, জিপসি আর মন্দিরা নিয়ে গান শুরু করতেই সব জমজমাট হয়ে গেল। পার্টিসিপ্যান্ট থেকে শুরু করে স্কাউট, এডমিন সব্বাই এসে যোগ দিলেন। নেচে গেয়ে চমৎকার একটা উৎসব করে ফেললাম আমরা। শাওন ভাই, অপু ভাই গান ধরেন, নিকসেঙ তবলা বাজিয়ে তাল ধরে আর নোমান ভাই ধরেন জিপসি। একে একে শাওন ভাই, অপু ভাই, নোমান ভাইদের গানের স্টক ফুরিয়ে গেল। সেই মুহুর্তে অত্যন্ত সুখি শাওন ভাই ধরলেন পাহাড়ি গান গাইতে হবে। আমি পড়লাম মহা ফাপরে। পাহাড়ি গান কই পাই! ‘শুরুতেই চল মিনি আসাম যাবো’ গেয়ে পাহাড়ি গানের স্টক অলরেডি খালি করে ফেলছি। অবশ্য এই এক গানেই ততক্ষণে আসর জমে ক্ষীর। তাই আমি পালিয়ে বেড়াই আর শাওন ভাই একটু পর পর তূর্য্য কই তূর্য্য কই রব তোলেন। আমাকে ধরে তার সামনে আনা হয় আর তিনি বলেন, এবার আমরা একটা পাহাড়ি গান গাইব আর নাচব। আচ্ছা? আমি হাসি আর মাথা নাড়ি। এরই মধ্যে অপু ভাই ভাবলেন আমি হয়তো ফিলের অভাবে গান গাচ্ছি না। তাই তিনি একটু ফিল পানিতে মিশিয়ে খাইয়ে দিলেন।

আমরা হেঁড়ে গলায় গানবাজনা করলাম। রাতে নদীর পাড়ে একটু বসে ক্যাম্পে ফিরে রাতের খাবার দেখে জিভে জল চলে আসার অবস্থা। গরম গরম পরোটা আর সবজি, ডাল আর মুরগির মাংস! পেট পুরে পরোটা আর ফিল খেয়ে নদীর পাড়ে চাঁদের আলোয় চমৎকার একটা সময় পার করে ঘুমাতে চলে এলাম।

গতকালের পথের অনেকটুকুই আজ আবার যাওয়া হল। আসামবস্তি ব্রীজ থেকে কাপ্তাই। মোট একুশ কিলোর ম্যারাথন। চার জন পুরোটা পথ দৌড়ে পাড়ি দিল। এরমধ্যে মনোজ (হাইলি স্কিলড হাইকার) এবং দিদার ভাইয়ের নাম জানি তাই উল্লেখ করলাম। বাকিরা কেউ কিছু পথ হেঁটে কিছু দৌড়ে, কেউ হেঁটে হেঁটে ছবি তুলে তুলে কেউ বা কিছু পথ হেঁটে কিছু পথ গাড়িতে করে এসে বিকেলে পৌঁছলাম কাপ্তাই সদরে।

সন্ধ্যের পর পর শিল্পকলা একাডেমি থেকে তবলা হারমোনিয়াম এনে গান বাজনা করা হল। টিম বিল্ডিংয়ের পার্ট হিসেবে পার্টিসিপ্যান্টরা খুবই অল্প প্রিপারেশনেই দুর্দান্ত কিছু কাজ করে দেখাল। কাপ্তাই উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির একজন শিল্পী গান শোনালেন। আরও গান গাইলেন এই থানার টিএনও। সবশেষে আমরা করবো জয় গেয়ে সময়টা খুবই উপভোগ্য কাটল। রাতে হুট করে বারবিকিউ করে আরেক হুলুস্থুল।

পরদিন কাপ্তাইয়ের বিশালতা, দুপাশের পাহাড় আর পাড়ের সৌন্দর্য আর লেকের শান্ত পানি কেটে কেটে যাওয়া নৌকা দেখতে দেখতে দুপুর নাগাদ চলে এলাম সেই উন্নয়ন বোর্ড ঘাটে, যেখানে কায়াকিং করেছিলাম। সেখান থেকে গন্তব্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে। আজকে তিন জেলা থেকেই পার্টিসিপ্যান্টরা ফিরে এসে এখানে জমায়েত হবে। কাল পুরো এডভেঞ্চার ফেস্টই যাবে ফুরমোন পাহাড়ের চূড়ায়।

সবার মিলনদৃশ্যটা খুব উপভোগ্য ছিল। অনেকেই দুই বেস্ট ফ্রেন্ড মিলে এসেছে কিন্তু দুজনের দুই জেলায় ক্যাম্পিং পড়ায় আলাদা হয়ে যেতে হয়েছে। মজার সব মানুষের ইন্সট্রাকশন আর টিম বিল্ডিং গুণে অপরিচিত সবাই সবার বন্ধু হয়ে গেছে। প্রথম দিন অন্য সবার থেকে একেবারে আলাদা হয়ে থাকা একজোড়ার জোড়া ভেঙে একজন খাগড়াছড়ি চলে গেছিল। আজকে তারা আবার একসাথে হল সাথে আরও অনেক বন্ধু নিয়ে। চমৎকার তিনটি দিনের পর আবারও পুরোনো বন্ধুকে দেখে জড়িয়ে ধরা, গত কয়েকদিনের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ নতুন একেকটা প্রাণ পুরোনো সম্পর্কে ফিরে আসছে নতুন সম্পর্ক নিয়ে। কী চমৎকার! কী চমৎকার!!

বিকেলে রাঙামাটি ক্যান্টনমেন্টের রিজিওনাল কমান্ডার আমাদের ডেকে নিয়ে স্যুভেনির দিলেন। আমার জ্যাকেটটা আর্মিদের কাছাকাছি প্রিন্ট হওয়ায় সেটা নিয়ে যাওয়া গেল না। চমৎকার একটা ডেস্ক ম্যাটারিয়াল দিলো রাঙামাটি আর্মি। বঙ্গবন্ধু ন্যাশনাল এডভেঞ্চার ফেস্ট ২০২০ কে মানুষ এতো চমৎকারভাবে আলিঙ্গন করবে ভাবিনি।

ইদানীং সকাল সকাল ওঠা অভ্যাস হয়ে গেছে। পরদিন সকালে কমান্ড আসতেই রেডি হয়ে নিচে নেমে সকালের নাশতা। সরিষার তেল দিয়ে রান্না করা ভুনা খিচুড়ি খেয়ে গাড়িতে উঠে পড়তে হল। গন্তব্য সাপছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে যাওয়ার পর সেনাবাহিনী ফুরমোন ট্রেইলের ম্যাপ ব্রিফ করল। সকাল নয়টায় শুরু হল ফুরমোন ট্রেকিং এবং শেষ হলো বঙ্গবন্ধু ন্যাশনাল এডভেঞ্চার ফেস্ট ২০২০। ইভান ভাই এসে বললেন তার গিম্বল আমরা কে চালাতে চাই। নিকিসেঙের বরাবরই গেজেটের প্রতি তীব্র আকর্ষণ। সে লাফিয়ে লাফিয়ে গিম্বল নিয়ে শ্যুট করতে লাগল। আমি জানতাম পাহাড়ে উঠতে গেলে গিম্বল একটা দামি ও স্পর্শকাতর বোঝা ছাড়া আর কিছুই না। ওকে সেটা বলার আগেই দেখি সে গিম্বল নিয়ে দৌড় দিচ্ছে। উৎসাহ দেখে আমি কিছু বললাম না। উঠতে গিয়ে একটা অযাচিত বোঝা নিককে প্রচুর কষ্ট দিয়েছে এটা চূড়ায় উঠে তাকে দেখেই বুঝতে পারলাম। ফুরমোন ট্রেইল…হাহ!

রাঙ্গামাটি জেলাকে চারটি প্রধান পর্বতমালা বেষ্টন করে আছে। উত্তরাংশে উত্তর-দক্ষিণ মুখী হাজার ফুট উঁচু পাহাড়গুলি এ শ্রেণীতে পড়ে। পশ্চিমে ফুরমোন পর্বতমালা; এর উচ্চতা সর্বোচ্চ ১৫১৮ ফুট। এ পর্বতমালা দক্ষিণ-পূর্ব রামগড় পর্বতমালার অনুবৃত্তিক্রম। পার্বত্য রাঙামাটির সর্বোচ্চ চূড়ার আন্তর্জাতিক ধ্যানকেন্দ্র পৌঁছে তা থেকে সমতলে নেমে আসতে হবে। যদি রাঙামাটির উঁচুনিচু পথকে সমতল ধরি আর কী।

মোট তিনঘণ্টা চব্বিশ মিনিটে চূড়ায় উঠে আরও একবার অভিভূত হলাম। এই এডভেঞ্চারে অভিভূত শব্দটা ক্লিশে বানিয়ে ফেলেছি। এর জন্য দুঃখিত। নিক লাইনের সামনের দিকে ছিল। আমি ছিলাম শিহাব ভাই, হৃদয় ভাই আর জিহাদ ভাইয়ের সাথে লাস্ট পার্টিসিপ্যান্টদের খেদিয়ে নিয়ে যেতে। ট্রেক শুরুর মিনিট বিশেক পর শিহাব ভাইয়ের সাথে দেখা হল। উনি জিজ্ঞেস করলেন হৃদয় ভাই কোথায়। আমি বললাম হৃদয় ভাই সবার সামনে থেকে ফুটেজ নিচ্ছে। আমার চোয়ালভাঙা প্রত্যয় আর সীমাবদ্ধ বিশ্বাসে পানি ঢেলে একটু পর হৃদয় ভাই চুপিচুপি গাড়িতে করে এসে ধরা খেয়ে গেলেন।

বলা হয় আকাশ পরিষ্কার থাকলে ফুরমোনের চূড়া থেকে চট্টগ্রাম শহরও দেখা যায়। আমাদের ভাগ্য অত সুপ্রসন্ন ছিল না। তবুও কুয়াশার বুক চিরে রোদ উঠে যাওয়ায় পুরো রাঙামাটি চোখের সামনে ভেসে উঠল।

ফুরমোন থেকে নামার রাস্তাটা ঝুঁকিপূর্ণ। একজনের হাঁটার রাস্তা, দুপাশে তল দেখা যায় না এমন খাদ। রাস্তা ধরে ভলান্টিয়ার এবং সেনাবাহিনীর অত্যন্ত সাবধানি তত্বাবধানে পার্টিসিপ্যান্টরা আস্তে আস্তে নামতে লাগল। বুদ্ধি করে একশন ক্যামের চেস্ট মাউন্টটা নিয়ে এসেছিলাম। এটা এত ভাল কাজে লাগবে নিজেও আশা করিনি। নিকসেঙ আর আমি পার্টিসিপ্যান্টদের শরীর আর আর্মিদের চোখ এড়িয়ে উড়ে উড়ে নামতে লাগলাম। নিক সামনে স্লিপ খায়, দৌড়ায়; আমি পেছন থেকে ফুটেজ নিই। মোট চারঘণ্টা বারো মিনিট তিপ্পান্ন সেকেন্ড পর আমরা ফুরমোন খতম দিয়ে দিলাম।

বিকেলে উন্নয়ন বোর্ডের সংবর্ধনা ও পার্টিসিপ্যান্টদের সার্টিফিকেট দেয়ার অনুষ্ঠান। এরপর সন্ধ্যায় আতশবাজি ও ফানুস উৎসব। সাড়ে সাতটার ফানুস উৎসব চলে গেল নয়টায়। সময়টা খুবই বাজে কাটানোর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি এমন সময় সৃষ্টিকর্তা আরও একবার তার খেলা দেখালেন। আগেরদিন জানতে পারলাম রাহাত ভাই, রক্তিমরা রাঙামাটি আসছে। সন্ধ্যায় বের হয়ে তারা দেখা করতে চলে এল। রাঙামাটিতে এক টুকরো পরিবার পেয়ে আমি যে ঠিক কতটা খুশি হয়েছি তা স্কেল করা সম্ভব না। রাহাত ভাই, রিয়ু, রক্তিম, জেনিথ, রাহিল, আবিদ শেখসহ আরও অনেককেই কাছে পেয়ে প্রচন্ড উচ্ছ্বসিত হয়ে গেলাম। এদিকওদিক ঘুরাঘুরি করে, কাপ্তাইয়ের পাড়ে হাওয়া খেয়ে আতশবাজি ও ফানুস উৎসব দেখতে ওরা শহীদ মিনারে বসল। আমি বেরিয়ে এলাম ছবি ও ফুটেজ নিতে। চমৎকার একটা সময় গেল। দুর্দান্ত কিছু মুহূর্ত ধরে রাখতে পারলাম। শিহাব ভাই তার গো প্রোতে একটা অনন্য ফুটেজ নিলেন। দেখলে মুখ আপনাতেই হা হয়ে যায়।

প্রোগ্রাম শেষ করে শিহাব ভাইয়ের কাছে পারমিশন নিয়ে তাদের সাথে থেকে গেলাম আধঘন্টার জন্য। আমার খুব ইচ্ছে করছিল রাহাত ভাইদের সাথে রাতে থেকে যাই। খুবই ইচ্ছে করছিল। খুবই ইচ্ছে করছিল। খুবই ইচ্ছে করছিল। ওরাও খুব করে চাচ্ছিল আমি থেকে যাই। কিন্তু ক্যাম্পে তো ফিরতেই হবে। এডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের সাথে এটা আমার প্রথম কাজ। রেপুটেশন বিল্ড আপ করার একটা ব্যাপার থাকে।

পরদিন দুপুরের আগেই পুরো ক্যাম্প ফাঁকা হয়ে গেল। তাঁবুগুলো খাঁখাঁ করছে। স্কাউটরা তাঁবু উঠিয়ে ফেলছে। ষোল তারিখের এক মনমরা বিকেলে আট তারিখের সকালটা হুট করেই ফিরে এসেছে।

স্কাউটদের কথা একটু আলাদা করে বলতেই হবে। নয়ত আমি নিজের কাছে একজন অকৃতজ্ঞ হিসেবে পরিচিত হয়ে যাব। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোট আটটা দিন তারা অমানুষিক পরিশ্রম করেছে। যেকোনো কাজে ছুটে এসেছে। ক্লান্তিহীনভাবে সব ধরনের সাহায্য বিনা প্রশ্নে করে গেছে। চোখে চোখ পড়লেই মিষ্টি হাসি ছাড়া আর কিছু দেখিনি। কয়েকটা স্কাউট খুব সাগরেদ বনে গেছিল। আমি যদি আবারও কাপ্তাই যাই, সবার আগে আমি এই এদের সাথে দেখা করতে চাইব।

কিছু অসাধারণ মানুষদের সাথে পরিচয় হয়েছে গত কদিনে। লিটারেলি জীবনে প্রথম এক জায়গায় একসাথে এতগুলো চমৎকার মানুষ দেখলাম। তাদের কথা না বললেই নয়।

মশিউর ভাই এডভেঞ্চার ফেস্টের সবচে বড় মাথা। ছোটখাটো এই মানুষটার ব্যক্তিত্ব অসাধারণ। শাওন ভাই, দ্য সেকেন্ড ইন কমান্ড, শেষ বয়সেও আমি নীল জ্যাকেট, নীল জুতার সুন্দর চেহারার এই ব্যক্তিটির মত হাসিখুশি থাকতে চাই। হাসি আনন্দের ফেরিওয়ালা এই লোকটির জীবনে সৃষ্টিকর্তা কোন দুঃখ না দিক।

শিহাব ভাই ও মৃধা ভাই, দ্য চীফ, আমাদের মিডিয়া টিমের চীফ। হিপোক্রেসিকে খুব সচেতনভাবে অবজ্ঞা করে যাওয়া এই মানুষ দুজনের কাছ থেকে অবচেতনেই শিখে ফেলেছি কিভাবে মনে কোন সঙ্কোচ না রেখেই কিভাবে সবাইকে নিয়ে টিম বিল্ড করে কাজ করতে হয়। সামনের কঠিন পথ পাড়ি দিতে এই মানুষ দুজনের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা আমার বড় কাজে আসবে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

নোমান ভাই আর মামুন ভাই লজিস্টিকস ও এর যাবতীয় কাজ খুবই অসাধারণভাবে সামলেছেন। প্রচণ্ড গল্পপাগল এই দুইজন আন্তরিক মানবের সাথে দেখা হয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হয়েছি। ।

সবমিলিয়ে বঙ্গবন্ধু এডভেঞ্চার ফেস্ট ছিল আমার জীবনের এক অন্যতম এডভেঞ্চারের অনবদ্য অভিজ্ঞতা। প্রকৃতির মাঝে, মানুষের মাঝে, একতাবদ্ধ হয়ে জীবনের গভীর অর্থের মুখোমুখি হওয়ার এমন সুযোগ প্রত্যেকের কাছেই স্মরণীয় হয়ে থাকে। জীবনের এইসব মানেগুলোকে বুকে ধারণ করে নিয়েই সামনের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জেগে ওঠে। যাপিত মুহূর্তগুলোর এই মূল্য যেন আজীবন বহন করে যেতে পারি, এই কামনায় হেঁটে চলি জীবনের পথে… 

লেখক: শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম দিন