গল্প : ব্যতিহার : মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম

0

অলংকরণঃ ফারিনা আহমেদ

সেন্ট্রাল পার্কে বিকেল নেমেছে। জায়গাটা সেরেনার দারুণ পছন্দের। হঠাৎ একটা জায়গায় চোখ আটকে গেল সেরেনার। বিমর্ষ পাগল প্রায় মাঝবয়সী একটা ছেলে বসে আছে। চেনা চেনা লাগছে। গলায় একটা প্ল্যাকার্ড ঝুলছে। তাতে লেখা― ডাক্তার বলেছে, তুমি সুস্থ হওয়ার জন্য দূরে থাকা জরুরি।

বছরদেড়েক আগের কথা। সারাদিনের খাটুনি শেষে শরীরটা প্রিয় বিছানায় এলিয়ে দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে জেমস। মেসেঞ্জার টিউনটা বেজে উঠল। সাথে একটা বন্ধুযোগের অনুরোধ।  

‘আপনি কি জানেন যিশু আপনাকে নরকে প্রেরন করবেন? এত সুন্দর করে কথা বলার সম্মোহনী শক্তি দিয়ে টানা দুই ঘণ্টা কাউকে নেশাগ্রস্থ, বিমোহিত করে রাখার অপরাধে আপনি পরজন্মে নরকে যাবেন’।

আইফোনের আইএসও ডিসপ্লেতে ভাসতে থাকা অদ্ভুত মেসেজটা বিস্মিত চোখে দেখছে আর হাসছে জেমস। কিছুক্ষণ আগে এক অনুষ্ঠানে সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিল জেমস। এরপর থেকেই প্রথমে ফেসবুকে পরে হোয়াটসএ্যাপ,  ভাইবার,  টুইটার, ইনস্ট্রাগ্রাম,  স্নেপচ্যাট,  উয়েবু থেকে শুরু করে উইচ্যাট কত মাধ্যমেই না পরস্পর বার্তা আদান প্রদান হতে থাকল। খুদেবার্তা, ভয়েজচ্যাট, ভিডিও কলিং আস্তে আস্তে কত আপন! কত ঘনিষ্ঠ!

ভার্চুয়াল প্রেমের প্রায় পাঁচ মাস পর দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয় দুজন। ‘ফার্স্টডেট’ এর জন্য সেরেনার পছন্দের জায়গা সেন্ট্রাল পার্ক ঠিক হয়। যদি বিশ্বের অন্যতম প্রসিদ্ধ ও বহুল পরিদর্শিত পর্যটন গন্তব্যস্থলের কথা বলা হয় তাহলে সবাই একনামেই চিনবে নিউইয়র্ক সিটির সেন্ট্রাল পার্ক। একটি নিখুঁত নির্মাণ ও সাথে রোমাঞ্চকর বিভিন্ন বিষয়গুলো সঙ্গ করে সেন্ট্রাল পার্ক সকলকে সম্পূর্ণরূপে পরিতৃপ্ত করে। মজার ক্রিয়াকলাপের মধ্যে রয়েছে স্ট্র্যোলিং, আইস-স্ক্যাটিং, হর্স-রাইডিং, বাই-সাইকেল রাইডিং, রোলার ব্ল্যাডিং আরও কত কি! দর্শনার্থীদের সন্তুষ্টি প্রদানের সচেষ্টতায় বেশ কিছু নির্মল-শান্ত অঞ্চল আছে যেমন, ইস্টগ্রিন, স্ট্র্যবেরিফিল্ড, শেক্সপিয়ার গার্ডেন, শিপমিডোও, টার্টেল পন্ড ও কনসার্ভেটোরি গার্ডেন। দুজনেই দারুণ রোমাঞ্চিত।

অবশেষে বহুল আকাঙ্ক্ষিত সেই মুহূর্ত। দেখা, কথা, স্ক্যাটিং করতে করতে কখন যে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামল তা একেবারেই টের পেল না। যাওয়ার বেলায় এক মিউজিক সিডি ধরিয়ে দিতে দিতে জেমস ব্রানুমার্সের সেই বিখ্যাত ভঙ্গিমায় বলে ওঠে –

And when you smile, the whole world stops and starts for a while, cause you’re amazing, just the way you are.”

এভাবেই চলতে থাকে। দূরে দূরে থাকতে আর ভালো লাগেনা দুজনের। টরন্টো থেকে নিউইয়র্ক প্রায় ৮শ কিলোমিটার দূর। এটা যেন আটজন্মের দূরত্ব। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিল বিয়ে করবে। কিন্তু সেরেনার বাবা’র দ্বিমতে সিদ্ধান্ত হলো সেরেনার লেখাপড়া শেষ হওয়ার আগে বিয়েটা হচ্ছেনা। তবে তারা যদি চায় একসাথে থাকতে পারে।

জেমসরা দুই ভাই। মা জেনিফার বেশ শান্ত স্বভাবের মানুষ। বাবা আর্নল্ড সারাক্ষণ ভায়োলিন নিয়ে পড়ে থাকে। ছোট ভাই ক্রিস্টোপার বেশ মিশুক ও পড়ুয়া। অনলাইন ম্যাগাজিনে ও কাজ করে ব্যাপক। এই হলো জেমসের পরিবার। সেরেনা মহাখুশি। একদম মনের মতো ঠিকানা পেয়েছে সে। বাহারি স্বপ্ন বুনতে থাকে। স্বপ্ন বুনতে বুনতে স্বপ্নের মাঝে স্বপ্ন দেখা শুরু করে সেরেনা। মেয়েটা ঘুমিয়ে যায়। পাশেই জেমস জেগে থাকে। ঘুম জড়ানো চোখ খুলে সেরেনা বলে ‘এই তুমি ঘুমুবে না? এসো ঘুমাবে।’

জেমস হাসে, বলে – তুমি ঘুমোও, আমি আরেকটু পর ঘুমাব।

সেরেনা চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ে। বাইরে বরফ পড়ছে, ভারী লেপটা গায়ে দিয়ে শুয়ে থাকায় চট করে ঘুমিয়ে যায় সেরেনা।

জেমস পাশ ফিরে তাকায়। ডানহাত বের করে নেয় লেপের ভেতর থেকে। অবাক চোখে ঘুমন্ত নিষ্পাপ চেহারাটার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে। কী অদ্ভুত এক মায়া চেহারাটার মাঝে। বন্ধ করা চোখের পাতা মাঝে মাঝে কেঁপে ওঠে। জেমস দেখতেই থাকে। কপাল ছুঁয়ে আছে একমুঠো চুল। জেমসের ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। সেরেনা জেগে যাবে বলে ছোঁয়না।

কনকনে শীতে জেমসের হাত ঠান্ডা হয়ে আছে। জেমস ঠান্ডা হাত মেয়েটার গালে ছুঁয়ে মজা পায়। তার ছুঁতে ইচ্ছে হয়। ছোঁয়না, সেরেনা জেগে যাবে বলে। জেমস অপলক দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়েই থাকে। হঠাৎ বন্ধ চোখের পাতা নেচে ওঠে। চোখের পাতা সরে ছোট্ট দুটো চোখ উঁকি দেয়। ঘুমজড়ানো কন্ঠে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘কী দ্যাখো?’  

– কিছুনা।

সেরেনা চোখ বুঁজে মুচকি হেসে জেমসের হাত বালিশের উপর নেয়। সেই হাতের উপর তার গাল রেখে চুপচাপ শুয়ে থাকে। ঠান্ডা হাত লাগায় একধরনের শিউরে ওঠা ভাব থাকে,  সেরেনার তারপরও ভালো লাগছে। এ যে এমন একজনের হাত, যেই একজন তার।

এবার জেমস আবার তাকিয়ে থাকে। সেরেনা আবার চোখ খুলে পিটপিট করে তাকিয়ে বলে-

– এই শুনছ?

– হুমম বলো।

– তোমার হাত অনেক ঠান্ডা। সরিয়ে নাও?

– আচ্ছা।

জেমস হাত সরিয়ে নেয়। অল্প অল্প মন খারাপের রেখা ভাসে গালে-কপালে। সেরেনা চোখ বুঁজে আছে, তাই দেখেনা তবে বুঝতে পারে।

মেয়েটা আবার চোখ খুলে, পিটপিট করে তাকায়। বলে-

– এই শুনছ?

– হ্যাঁ, বলো।

– বালিশটাও না খুব ঠান্ডা।

– এখন কী করা? বালিশ সরিয়ে নেব?

– উহুঁ

– তাহলে?

– তোমার বুকে মাথা রাখি?

সেরেনা উত্তরের অপেক্ষা করেনা। চুপচাপ মাথা রাখে জেমসের বুকে। বুকের গহীন থেকে গর্জন আসে। গর্জন আসে ভালোবাসার, গর্জন আসে অনেক পাওয়ার, গর্জন আসে সুখের। চোখ বুঁজে সেরেনা সে সুখ মেখে নেয়। এ বুক তার, শুধুই তার। এই ছেলেটা তার হবু স্বামী, শুধুই তার।

জেমস হাসে। অনেক পাওয়ার হাসি। আলতো করে সেরেনার চুলে হাত রাখে। ঠান্ডা হাত।

কয়েকদিন ধরে সেরেনা লক্ষ্য করছে জেমস মধ্যরাতে উঠে বসে থাকে। জিজ্ঞেস করলে বলে, কিছুনা এমনিই। সেরেনা ভাবে। পরে ঠিক করল কথাটা জেনিফার কে বলবে। জেনিফার সেরেনাকে বলল ঠিক আছে, আমি রয়েলকে বলে দেখব চেক করে দেখার জন্য। রয়েল তাদের ফ্যামিলি ডাক্তার। রোজ সকালে এসে পরিবারের সবার দেখাশুনা করে যায়। জেমসের এই রাতজাগা বাড়তে লাগল। সারাদিন স্বাভাবিক কিন্তু রাতে ঘুমায় না। সেরেনা সবার কাছে বলছে কিন্তু কেউ শুনছে না। সবাই বিষয়টাকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে। সেরেনাও রাত জাগতে শুরু করে। জেমসের সাথে কথা বলে, সঙ্গ দেয়, ঘুম আসলেও ঘুমায় না। হঠাৎ একদিন সেরেনা আবিষ্কার করল জেমস গভীর রাতে কেমন যেন অস্বাভাবিক আচরণ করে। শুয়ে কাঁপতে কাঁপতে ঘেমে যায়। সেরেনা ভয় পায়। কী করবে বুঝতে পারে না। দুশ্চিন্তায় অবস্থা খারাপ সেরেনার। কাউকে কথাগুলো বুঝাতেও পারছে না সে। সবার কাছে বিষয়টা স্বাভাবিক। 

সেরেনা অনেক খোঁজ খবর নিয়ে মি. রয়েলের চেম্বারে গেল।

– আচ্ছা মি. রয়েল, জেমসের সমস্যাটা আপনি বুঝতে পারছেন না?

– জেমসের ট্রিটমেন্ট চলছে তো।

– ও রাতে ঘুমোতে পারছে না।

– ওষুধের কার্যকারিতা দ্রুত শেষ হয়ে গেলে এমনটা হয় আরকি।

– কিসের ওষুধ?

– ওদের পরিবারের সবার একটা কমন সমস্যা আছে।

– আপনি কী বলছেন এসব?

– মিস সেরেনা। আমি ঠিকই বলছি। আমি আজ তের বছর ধরে ওদের ফ্যামিলি ডাক্তার। ওরা সবাই একটা মানসিক রোগে ভুগছে। নিউরোসিস।

– এটার মানে কী ডাক্তার? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।

– ইয়েস, মিস সেরেনা। নিউরোসিস বা সাইকোনিউরোসিস বা পরিজ্ঞানসম্পন্ন মানসিক রোগ হলো কিছু মানসিক রোগের সমন্বিত নাম। এই রোগে আক্রান্তদের নিউরোটিক বলা হয়ে থাকে। এসব রোগে গুরুতর বাতুলতার উপসর্গ থাকে না, ব্যক্তিত্ব তুলনামূলকভাবে অক্ষত থাকে এবং রোগী বাস্তবতাবোধ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় না। প্রকৃতপক্ষে নিউরোসিসকে  মানসিক চাপের মুখে রোগীর প্রতিক্রিয়ার অস্বাভাবিক প্রকাশ হিসেবে গণ্য করা যায়। নিউরোসিস একটি রোগ নয়;  বরং কয়েকটি মানসিক রোগের সমন্বিত নাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রোগ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক শ্রেণি বিন্যাস পদ্ধতি অনুসারে নিউরোসিস পরিবারভুক্ত মানসিক রোগগুলো বিভিন্ন রকমের হতে পারে। এই যে ধরুন- Anxiety Disorder, Generalized anxiety disorder, Phobic Anxiety, Panic Disorder, Obsessive–compulsive Disorder .

– ডাক্তার ওদের এই সমস্যাটা কতদিনের? আমি এতদিন ধরে আছি কিছু বুঝতে পারলাম না কেন?

– এটা প্রায় চার বছর ধরে চলছে। ওর বাবা আর্নল্ড ছিলেন আমেরিকান আর্মির বেশ চৌকশ অফিসার ছিল। বীরত্বের সাথে যেকোন সমস্যা মোকাবেলা করত। ওনার সম্মান, সুনামও ছিল আকাশচুম্বী। এটা নিয়ে বেশ গর্ব করত সমগ্র পরিবার। একদিন এক অভিযানে মি. আর্নল্ডের গুলিতে প্রাণ হারায় আরেক সেনা কর্মকর্তা। মি. আর্নল্ড কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটে যায় পুরো ঘটনা। যাবতীয় ক্রেস্ট, মেডেল, র‍্যাঙ্ক কেড়ে নেয়া হয়। বরখাস্ত করা হয় চাকরি থেকে। অপমান, অপযশ আর লাঞ্ছনার শেষ থাকল না। পুরো পরিবার নিরবে নিভৃতে বিধ্বস্ত হতে শুরু করে। তার ফলাফল আজকের এই অবস্থা।

– ডাক্তার, ওদের মধ্যে তো আমি তেমন কিছু দেখি না শুধুমাত্র নিদ্রাহীনতা ছাড়া।

– আপনি ভুল বলছেন। ভালো করে খেয়াল করে দেখবেন- দুশ্চিন্তা, হতাশা, মনোযোগের অভাব, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অক্ষমতা, অযৌক্তিক ভয়, ঘোর, রোষপ্রবণতা, ঘুমের সমস্যা, অকারণ চিন্তা ইত্যাদি সব আছে।

কী করবে বুঝতে পারেনা সেরানা। মনে হচ্ছে পাগল হয়ে যাবে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে সেরেনা যেভাবে হোক জেমসকে সে সুস্থ করে তুলবেই। পড়াশুনা বন্ধ করে দিয়েছে, জেমসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাত জাগছে, নিয়মিত খাওয়াচ্ছে, মেডিটেশন করাচ্ছে, ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করছে সব করছে আর নিরবে নিভৃতে কেঁদে যাচ্ছে।

এখন জেমসের দুশ্চিন্তার কারণ সেরেনা। সব করতে করতে সেরেনা বুঝতেই পারল না কবেই সে নিজে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। জেমস সেরেনার মাকে ফোন করে। সমস্ত কথা বলে। মা সেরেনার সাথে কথা বলে।

-মা, তুমি ওদের কথা বিশ্বাস করনা তো। ওরা সবাই মানসিক রোগী। তাই সবাইকে অসুস্থ মনে করে। আমি একদম ঠিক আছি। তুমি চিন্তা করোনা। জেমস খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।

অস্বাভাবিক আচরণ করা শুরু করে দেয় সেরেনা। ডাক্তার বলে জেমসকে দ্রুত সুস্থ করার তাগিদ থেকে সে জেমসকে আয়ত্ব করার চেষ্টা করছিল। জেমসের সব সমস্যা বোঝার এবং ধারণ করার চেষ্টা করছিল। ওখান থেকেই এখন সে নিজেও আক্রান্ত।

সেরেনাকে তার মায়ের কাছে টরন্টো পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওখান থেকেই সে চলে আসে জেমসের কাছে।

– জেমস আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। প্রমিজ, আমি তোমাকে সুস্থ করে তুলব। আমি আর কিছু চাইনা জেমস।

বারবার পাঠানো হয় আবার চলে আসে। এভাবেই চলতে থাকে। এক পর্যায়ে জেমস বিরক্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় তাদের পেনসিলভেনিয়ার বাসায় শিফট হয়ে যাবে। যেই বলা সেই কাজ। উধাও হয়ে গেল পুরো পরিবার।

আজ সকাল সকাল রওনা দিয়েছে সেরেনা। জেমসের জন্মদিন। উইশ করবে সেরেনা। কত পরিকল্পনা, কত গিফট, কত কী! কেক অর্ডার করে এসেছে। সময়মত চলে আসবে। হালকা মেকআপ নিয়েছে। গাঢ় কাজল, হালকা রঙের লিপস্টিক আর সাথে জেমসের পছন্দের ধবধবে সাদা গাউনে অপরূপ লাগছে। বিশাল সারপ্রাইজ দেবে আজ।

ক্যাব থেকে নেমেই দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় সেরেনা। কেয়ারটেকারকে দেখা যাচ্ছে না। চারপাশে চোখ মেলে খুঁজে সেরেনা। এগিয়ে যায়। দরজা বন্ধ। দারুণ এক্সাইটেড সে। দরজাতো নিয়মিত জেনিফারই খোলে। আজকেও কি তাই হবে!  জেমস খুললে তো চমক। এসব ভাবতে ভাবতে কলিং বেলে হাত বাড়ায় সেরেনা। একবার দুইবার কোন সাড়া শব্দ নাই। ভয়ে শিউরে ওঠে সেরেনা। কোন বিপদ হয়নি তো? অনবরত বেজে যাচ্ছে কলিংবেল। চটপট করতে থাকে সেরেনা। পায়চারি করতে থাকে। এমন সময় দরজার এককোণায় কাগজের ছোট্ট একটা টুকরায় চোখ গেল তার।

জেমসের কাঁপা কাঁপা হাতে লেখা-

‘A psycho doesn’t belong to another psycho.

Get well soon’.

বন্ধ দরজার একপাশে আঁটা দিয়ে লাগানো ছোট্ট এই চিরকুট পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সেরেনা। বুঝতে বাকি রইল না তার। অতি যত্নে লাগানো আইশ্যাডো আর কাজলের রং অশ্রুর সাথে একাকার হয়ে ধবধবে সাদা গাউনটাতে চিকচিক বাদামি দাগের সৃষ্টি করছে। বিড়বিড় করে বলতে থাকে- জেমস, এটা ছিল জন্মদিনের সেরা সারপ্রাইজ।

লেখক: শিক্ষক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম দিন