জেনাস ভৌমিক।। গল্প।। রং

0

আর্টওয়ার্ক: রাশেদ সুখন।

-নিজামুর রহমানের সাথে আপনার কত দিনের পরিচয়?

-নিজামুল রহমান কে?

-নিজামুল না নিজামুর রহমান। সেনাবাহিনীর বহিষ্কৃত সদস্য নিজামুর রহমান। 

-আমি তো উনাকে চিনি না।

-আপনাকে উনার সাথে এক রিক্সায় চড়তে দেখা গিয়েছে। শুধু শুধু মিথ্যা বলছেন কেন?

এই যে এই ভিডিও ফুটেজটি দেখার পর নিশ্চয় আপনি অস্বীকার করবেন না যে আপনি নিজামুর রহমানকে চিনেন না।

বদ্ধ রুমে শুনশান নিরবতা। একটি টেবিলের দুই পাশে মুখোমুখি বসে আছে গোয়েন্দা বিভাগের বিশেষ শাখার প্রধান  সানোয়ার সালেহীন এবং  চিত্রশিল্পী মানিক হোসেন । 

সাদা দেয়ালে প্রজেক্টরের আলো প্রতিফলিত হলো। একটি ভিডিও ফুটেজ চালু করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে মানিক একটি লোকের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর নতুন বাজার মোড় থেকে রিক্সায় উঠলো। লোকটি বদরের মোড় নেমে যায়। একটি ব্যাগ রেখে যায় রিক্সায়। সে ব্যাগটি চড়পাড়া মোড়ে মানিকের কাছ থেকে সংগ্রহ করে একজন লোক।

ভিডিওটি দেখে সব মনে পড়ে যায় মানিক হোসেনের। সেদিন ছিলো শনিবার। মানিক টিউশন শেষে মেসে ফেরার জন্য নতুন বাজার মোড়ে অটোরিকশায় উঠার জন্য যায়। এদিন অটোরিকশা সমিতির হরতাল থাকায় কোন অটো না পেয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাকে। পাশে এক লোক পেয়ে তার সাথে আলাপ জুড়ে দেয়,

-এভাবে চলা মুশকিল, প্রতি অটোতে ৬ জনের বেশি তুলা যাবে না নিয়ম করায় অটোরিকশা সমিতি হরতাল ডেকেছে। সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে। এখন ৫ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা দেওয়ার জন্য রিকশা নিতে হবে।

-চলেন দুইজন মিলে এক রিকশা নিয়ে নেই। তাহলে ত্রিশ টাকা ভাড়া লাগবে না। দুইজন ১৫ টাকায় যাওয়া যাবে।

-ঐ যে একটা রিকশা আসছে, এটায় যাওয়া যাক।

মানিক অপরিচিত ঐ লোকটির সাথে এক রিক্সায় চড়ে রওনা হয় চড়পাড়ার উদ্দেশ্য । পথিমধ্যে লোকটি নেমে যায় বদরের মোড়ে। একটি বাইকে উঠে মুহুর্তের মাঝে চোখের আড়াল হয়ে যায়। অনেক ডেকেও তাকে থামানো যায়নি।

চড়াপাড়া মোড়ে তার রিকশা যখন জ্যামে পড়ে তখন এক লোক এসে এই ব্যাগটি নিয়ে যায়। মানিক নিতে বাধা দিয়েছিল। তখন সেই লোক ভিডিও কলে রিকশার লোকটির সাথে কথা বলিয়ে দেয়। রিকশার লোকটিই যে বিদ্রোহী সেনা সদস্য নিজামুর রহমান তা এখন স্পষ্ট বুঝতে পারছে মানিক হোসেন। ভিডিও কলে নিজাম বলেছিল,

-ভাই ভুলে ব্যাগটা রেখে চলে গিয়েছিলাম। পরে মনে পড়েছে ব্যাগের কথা। উনি আমার বন্ধু, তাকে ব্যাগটা দিয়ে দিন।

এর পর ঐ লোককে ব্যাগটা দিয়ে দেন মানিক। 

সানোয়ার সালেহীন এর  মুখে হাসি ফুটে উঠলো।

-এবার চিনতে পেরেছেন নিজামুর রহমান কে?

– হ্যা, চিনতে পেরেছি স্যার।

-তাহলে বলুন  উনি কোথায়?

– স্যার সত্যি বলছি আমি জানিনা, আর এই লোক নিজামুর রহমান তাও জানতাম না।

– না জেনে কেউ অপরিচিত লোকের সাথে এভাবে একসাথে রিকশা দিয়ে যায়? বন্ধুর ব্যাগ আরেকজনকে পৌঁছে দেয়!

– স্যার আমি উনাকে চিনি না। আমার পকেটে রিকশা ভাড়ার টাকা ছিলো না তাই উনার সাথে শেয়ারে রিকশা নিয়েছিলাম।

-আমাকে বোকা মনে হয়? এত গুলো মানুষকে মেরে বিন্দু মাত্র অনুশোচনা নেই? 

-আমি কোন মানুষ মারি নি স্যার।

– তা বটে! আপনি শুধু ঐ ব্যাগটির বোমা পরিবহন করেছেন। তারপর সে বোমা অন্য ব্যক্তি ফাটিয়ে মানুষ হত্যা করলে আপনি বলতেই পারেন আপনি কোন মানুষ মারেন নি!

-সত্যি বলছি স্যার আমি ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমি শুধু শেয়ারে রিকশা ভাড়া নিয়েছিলাম। এর বাহিরে আর কিছুই না।

অনেক চেষ্টা করেও কোন তথ্য বের করতে পারেনি সানোয়ার সালেহীন। ইলেকট্রিক শক্, ডিম থেরাপি, গরম কয়লার উপর নিক্ষেপ করেও মানিকের কাছে ব্যর্থ হয় গোয়েন্দা বিভাগ । 

একদিন রাত দুটোয় চোখে কালো কাপড় বেঁধে মানিক হোসেন কে  গাড়িতে তোলা হয়। ময়লার দুর্গন্ধ পেয়ে মানিক বুঝতে পারে তাকে হয়তো শম্ভুগঞ্জ ময়লাকান্দিতে আনা হয়েছে। ময়লার গন্ধে তার নাড়িভুড়ি মোচড় দিয়ে বমি আসা শুরু হয়।

এরপর কয়েক রাউন্ড গুলির আওয়াজ। বমির হলুদ  রঙের  সাথে রক্তের লাল রং মিশে  এক অদ্ভুত রঙের সৃষ্টি হয়। যদিও সে রঙ দেখার সুযোগ হয়নি আর্টের শিক্ষক  মানিকের।

লেখক: গল্পকার, শিক্ষার্থী। জাককানইবি।

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম দিন