গল্প:জীবন একটা হাওয়াই মিঠাই:এ এইচ এম কামাল

2

অলংকরণ: ফারিনা আহমেদ

‘দশ মিনিটের নামাজ শেষে বিশ মিনিটের দোয়া। কীসের এতো চাহিদা? চল্লিশটি বছর যাদের জন্য নিজের রক্তকে লবণ করে নিজেরা ক্ষীয়মান হয়েছি উল্টো তারাই আমাদের নির্বাসিত করে সটকে পড়েছে। আর কী বা চাওয়ার আছে? যত সব শকুনের দল। মরলে তবেই ফিরবে। এবার রাতের খাবার খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর। হাঁটুর ব্যথা নিয়ে আর পারিনা। শুতে যাব।’ কথাগুলো এক দমে বলে গেল রীমা। দোয়া শেষে জায়নামাজ ছেড়ে স্ত্রীর কাছে এসে বসে সাহেদ। হাসতে হাসতে বউয়ের শরীরে ফুঁ দেয় সে। নামাজ শেষে বউয়ের শরীরে ফুঁ দেওয়া তার অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে। ফুঁ দিয়েই সে বউকে খোঁচা দেয়, ‘আজরাইলের মতো ফেরেশতা বলে কথা! জানো, কত ব্যস্ততা তাঁর? জগত জোড়া তাঁর ছুটাছুটি। ছোট দোয়ায় তাঁর সাক্ষাৎ মিলে? দেখছ না, ফুঁ দিয়ে পথ দেখিয়ে দেবার পরেও সে তোমায় চেনার সময় পাচ্ছে না। তুমি মরলে শান্তির নিঃশ্বাস নিতাম।’ সাহেদের কথায় ক্ষেপে যায় রীমা, ‘আমাকে মারতে হবে না। আগে নিজে মরে আমায় রক্ষা কর।’

এমন আলাপে দুজনের ঝগড়া বাঁধার জোগাড়। দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে সাহেদ বুঝে গেছে বউ রাগলে তাকে কী করে থামাতে হয়। বউয়ের কথায় সে চল্লিশ বছর আগের স্মৃতিতে ফেরত যায়। তারপর সে বউয়ের হাত ধরে স্মৃতিচারণ করতে থাকে।

১৯৮০ সালের কথা। সেদিন ছিল জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের সোমবার। কোন রকম হৈ চৈ ছাড়াই আমাদের বিয়ে হয়ে যায়। তোমার মামার ওকালতিতে হ্যাপি কাপল হবার আশায় দুই চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে জুটি বেঁধেছিলাম আমরা। হঠাৎ করে বিয়ে হয় আমাদের, এবং তা খুব অনাড়ম্বর ভাবে। অতিথি বলতে বাড়ির খুব নিকট আত্মীয় মতো দুই একজন এসেছিল। তারাও বিয়ের পরদিন বিদায় নিল। কারণ বিয়ের ঠিক কদিন আগে মেস-বন্ধুদের ফেলে ছোট একটি বাসা নিয়ে আমি আলাদা হয়েছিলাম। এমন দুকক্ষের ছোট বাসায় আগত আত্মীয়দের জায়গা করা কঠিন ছিল। সেটা আগের রাতে বাসার সবাই খুব ভাল করেই টের পেয়েছিলাম। সে রাতে তুমি শুয়েছিলে মহিলাদের সাথে, আর আমি অন্য কক্ষে পুরুষ আত্মীয়দের নিয়ে। কিন্তু মাঝ রাতে কেউ একজন বিপত্তি বাঁধাল। সম্ভবত বিয়ে খেয়ে তার পেট খারাপ করেছিল। পেটের চাপ সইতে না পেরে বেচারার পশ্চাৎদেশে বার কয়েক লিক করেছিল। সেটা রিকশার চোরাই লিকের মতো হলেও আদতে তা ব্ল্যাক হোলের বিগ ব্যাঙ হয়ে প্রকাশ পেল। নিঃশব্দে সারা কর্ম এত বড় হয়ে আত্মপ্রকাশ করল যে দুকক্ষের মানুষেরই টিকে থাকা দায় হচ্ছিল। এত বড় হয়ে বিস্ফারিত হবার কারণ হলো বাসার স্বল্প আয়তন। তা বুঝতে পেরে সবাই সকালে যে যার মতো বিদায় নিল।

বাড়তি মানুষদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে যখন আমরা প্রথম সামনাসামনি দাঁড়ালাম তোমার শরীরে পাহাড়সম লজ্জা এসে ভর করল। যদিও তোমার মামার ইচ্ছায় বিয়ের আগে আমরা মাস-খানেক প্রেম করেছিলাম তথাপি সেদিন আবদ্ধ ঘরে এদিক-ওদিক চেয়ে আর কাউকে দেখতে না পেয়ে আমাকে তোমার এক অচেনা পুরুষের মতো লাগল। না, কোন অসভ্যতা বা অশুভ কাজের জন্য নয়। স্রেফ শরমে আমাকে তোমার অচেনা লেগেছিল। এতদিনের কল্পনার দিল্লিকা লাড্ডুকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও লাড্ডু ধরে ছুঁয়ে দেখার সাহস হারিয়ে মাথা নত করে নিলে তুমি। সেই সুযোগে আমি নিজেই সাধের লাড্ডু সেজে গেলাম। তারপর এক অজানা আনন্দে তোমায় দোলায়িত করে তোমার মস্তিষ্ককে বিকল করে দিলাম। আনন্দ-ভয়, উচ্ছ্বাস-উদ্বিগ্নতার সঙ্কোচবোধে দিল্লিকা লাড্ডুর কাছে নিজেকে সপে দিলে। লাড্ডুর স্বাদ চেখে দেখার তালে কখন যে তোমার সকল ভয়, উদ্বিগ্নতা উবে গেল তা আর মনেই ছিল না।

এমন নেশাময় খেলায় কেটে গেল সপ্তাহ। দ্রুত নেশা কেটে ফিরতে শুরু করল জীবনের অনুভূতি। বাসার রুটি-হালুয়া ফুরিয়ে এলে সামনে এসে দাঁড়াল অন্য জীবন। শুরু হলো ভিন্ন রকমের ব্যস্ততা। সেই ব্যস্ততার প্রথম প্রহরে কেনাকাটার তালিকা নিয়ে বাজারে ছুটলাম আমি। তখন থেকেই শুরু জীবনের ছুটে চলা। ছুটে চলতে চলতে শত পথ পাড়ি দিয়ে গত দুবছর ধরে আবদ্ধ হলাম নিজের বাসায়! সময় বড় পাষাণ। এক সময়ে ছুটে চলার পথে রঙিন চশমায় দুনিয়া দেখেছি। রঙিন দুনিয়ায় বিচরণকালে তুমি দুই ছেলের জননী হলে। তাদের মানুষ করতে যেয়ে কী কষ্টই না করেছ! অথচ তারাই আজ আমাদের ফেলে তাদের নিজেদের জগতে ব্যস্ত হয়ে গেছে। এত সাধনার তৈরি আমার বাসা ফেলে আমার সন্তানেরা স্বাধীন জীবনের আশায় আলাদা রয়েছে। এত বড় বাসাতেও নাকি তাদের জায়গা হয় না। আর আমরা আমাদের সংসার জীবনের শুরুতে দুকামরার বাসায় কী মধুর জীবন কাটিয়েছি! কিন্তু আমার সন্তানেরা স্বাধীনভাবে চলার নেশায় রঙিন চশমা পরে অস্থির ভাবে ছুটে চলেছে। মাঝে মাঝে আত্মসম্মান টিকিয়ে রাখতে মা-বাবার প্রতি ক্ষীণ দায়িত্ব পালন করে বটে। দায়িত্ব জ্ঞানের পরিচয় দিতে দুপুত্র মাসে পালা করে দুবার এসে বাজার দিয়ে যায়। তাতেই তাদের কর্তব্য সারা। সেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে তারা হয়তো ভাবে, আর কী-বা করার আছে? আমদেরকে তারা তো সুখেই রেখেছে! কিন্তু তারা কী বোঝে, দুপুত্রকে দেখার আশায় কী আগ্রহে বাজার দিতে আসা দুটি দিনের অপেক্ষায় থাকি আমরা? দুটি দিনের সুখ নিয়েই আমরা মাসের বাকি দিনগুলি সুখে কাটাই?

সাহেদের চোখ জলে ভিজে যায়। তাকে সান্ত্বনা দিয়ে কথা কেড়ে নেয় রীমা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে সে।

বিয়ের সপ্তাহান্তে কাগজে লেখা তালিকা নিয়ে তুমি বাজারে গেলে। এতো লম্বা তালিকার বাজার আগে কখনো করোনি। মনে না থাকার ভয়ে সব সওদার নাম কাগজে টুকে দিলাম। বাজার সেরে খুব জলদি ফিরে এলে তুমি। বাজারের ব্যাগ নিয়ে ঘরে প্রবেশ করা মাত্র আমার শাড়ির আঁচলে তোমার ঘাম মুছে দিলাম।

শাড়ির আঁচলে সেদিন বউ তার মুখ মুছে দিয়েছিল সে কথা মনে হতেই সাহেদ আবার সক্রিয় হয়ে উঠে। বউকে থামিয়ে দিয়ে নিজেই উল্টাতে থাকে স্মৃতির পাতা।

সেই ঘাম মুছে দেবার দিনই আমি লাড্ডুর স্বাদ চিনে গেলাম। সেজন্য আমি আজও বাহির হতে ফিরে তোমার আঁচলে মুখ মুছি। মুখ মোছার সময় তোমার গায়ে যে গন্ধ পাই, তা আমায় মোহিত করে। এটা কোন শারীরিক আকর্ষণ নয়। কেবলই ভাল লাগার ছন্দে দোলা। যাই হোক, সেদিনকার আলাপে আসি। গণ্ডগোল বাঁধল ব্যাগ খোলার পর। মিষ্টি কুমড়ার বদলে চাল কুমড়া আর ঝিঙার পরিবর্তে ধুন্দল এল। এসব দেখে বাজারের ব্যাগ গোছানোর সময় তোমার রাগ হওয়ারই কথা ছিল। কিন্তু তুমি তা করলে না। তুমি বুঝলে, বিয়ের পর প্রথম বাজার তাই ভুল কিছু হতেই পারে। তুমি তখনো ধৈর্য নিয়ে ব্যাগ থেকে সওদা বের করে চলেছ। আমি চেয়ে আছি তোমার দিকে। আমি যেন তোমার ভিতরের অনুভূতিকে পড়তে পারছিলাম। বাজারের ব্যাগ গোছানোর কাজে তোমার বেশ আনন্দ হচ্ছিল। সেদিনই বুঝলাম, নিজের সংসারে খাটা-খাটুনিতেও আনন্দ আছে। সে যেন এক পরম আনন্দ! তথাপি, বৈপরীত্যের মধ্যে আনন্দ খোঁজার একটা সীমা থাকে। ব্যাগ ভর্তি ভুলের বাজার। কিনতে বললে ভীম, আর নিয়ে আসলাম ডিম। তাতে অবশ্য মন্দ হয়নি, নতুন বিবাহিতদের পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন আছে বলে তুমি হাসলে। তোমার পরিপক্বতা দেখে আমি মুগ্ধ হলাম! কিন্তু সমস্যা হলো পাঙ্গাশ নিয়ে। ‘পাঙ্গাশ কেন? এ মাছ কে খাবে? পাঙ্গাশ মাছ দেখলেই আমার বমি আসে।’ তোমার এমন বিড়বিড় করে হালকা অভিমানের স্বরে বলা কথা আমি বুঝে গিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্বাস কর, কাজটি আমি জেনেবুঝে করিনি। আমি তখন মাছের জাত চিনিনা। তাই বোকার মতো ফিরিস্তি দিলাম― এগুলি পাঙ্গাশ না, এগুলি হল বোয়াল মাছ। আমি রুই আর মৃগেলের তফাৎ বুঝি না বলে ঠকে যাবার ভয়ে বোয়াল কিনেছি। তুমি তাতেই বুঝে গেলে কত বড় হাবাকে নিয়ে সংসার শুরু করেছ। সেই চিন্তা করতে করতেই মশলার ব্যাগে হাত দিলে। সেটা ধরে মাথা আরও গরম হয়ে এল তোমার। কিন্তু বিয়ের আজ সাত দিন। রাগ দেখান ঠিক হবে না ভেবে উষ্ণ হাসিতে আমার দিকে তাকালে। কারণ ব্যাগের ভিতর গোঁয়ামুড়ি আর জিরা একত্রে মেশান। আসলে এতে দোকানির দোষ ছিল না। এ কাজটি আমি নিজেই করেছিলাম। বাজারের বড় ব্যাগে জায়গা করার জন্য সওদার ছোট ছোট ব্যাগ এক করে দিয়েছিলাম। গোঁয়ামুড়ি আর জিরা দেখতে ভাই বোনের মতো। তাই সেগুলিকে এক মনে করে একত্রে মিশিয়েছিলাম।

যাক বাবা, বাকি বাজার ঠিক ছিল। শুধু দারুচিনি আনা হয়নি। কেন আনিনি তা জানতে পেরে শেষ বার তুমি হেসে নিলে। আমি দারুচিনি চিনিনা। তবে আমার ধারণা ছিল, সেটা বিশেষ কোন চিনি। কিন্তু যদি দোকানিকে বলে বোকা বনে যাই, সেই ভয়ে দোকানির কাছে আমার দারুচিনি চাওয়াই হয়নি। তখন অবধি কোন দিন বাজার করিনি। তাই অনেক সওদা চিনতাম না। কিছু মাছের তফাৎ করতে পারতাম না। অনেক পদের নাম জানতাম না। সেই আমাকে তুমি যেভাবে আগলে রেখেছ তাতে তোমাকে ফেলে আমি স্বার্থপরের মতো বিদায় নেই কী করে? আমি চলে গেলে যদি তোমার কষ্ট বাড়ে, সেই ভয়ে তোমার মরার জন্য দোয়া করি। তুমি যেন আমার হাতে মর।

‘জানো, সে ভাবনাটা না, আমারও হয়। তাই প্রতি রাতে শেষ প্রহরে উঠে দোয়ায় বসি। শুনেছি শেষ রাতের দোয়া নাকি কবুল হয়। তাই নিয়ম করে কাঁদি।’ এভাবেই ফের মুখ খোলে রীমা। আর এদিকে চোখ মুছতে মুছতে আবেগ নিয়ে সাহেদ রীমার দিকে চেয়ে থাকে। দেখে বোঝার উপায় নেই রীমার ভিতরে এতো আবেগ খেলা করছে। তাকে আরও আবেগী করে রীমা তখনো বলে চলেছে।

তুমি সারাজীবন ভুলো-মনা ছিলে। ভুলে যেতে আমার বড় ছেলের জন্মদিনটাও। দুছেলেই আমার নাড়ি ছেঁড়া ধন হলেও, বড় ছেলের সাথে আমার বয়সের তফাৎ বেশি না। ছোটবেলা ওকে আমার খেলার সাথী বলে মনে হতো। সারাদিন আমি ওর দিকে চেয়ে থাকতাম। কী যে ভাল লাগত! তার সকল খেলাধুলা, কথাবার্তা উপভোগ করেই আমার দিন যেত। জানো, ও ঘুমালে আমার ভাল লাগত না। ভাবতাম, সারাক্ষণ যদি সে জেগে থাকত; আমার গায়ে লেগে থাকত; আর দুষ্টু দুষ্টু কথা বলত! যার জন্য এত টান, তার জন্মদিনটাও আমাকে আলাদা করে ভাবাত। আমি চাইতাম তার জন্মদিন যেন ধুমধাম করে পালন কর। যেন তুমি তার জন্মদিন নিয়ে আলাদা পাগলামি কর। সেবার ছিল তার চতুর্থ জন্মদিন। রাত গেল, সকাল গেল। আমি অপেক্ষায় আছি। তুমি কিছু করবে বলে আশায় আছি। কিন্তু তোমার কোন বিকার নেই। তা দেখে আমার এতো রাগ হল যে দুপুরে আর রান্না করিনি। আমি রাগে আমার ছেলেকে নিয়ে শুয়ে পড়লাম। তুমি কিছু বুঝতে না পেরে আমাকে বিরক্ত করতে থাকলে। কেন এমন করছি তা জানতে চাইলে। এক পর্যায়ে ধৈর্য হারা হয়ে বলে দিলাম, আজ আমার ছেলের জন্মদিন। তুমি চোখ বড় করে অপরাধীর মতো চেয়ে থাকলে। স্যরি, স্যরি বলে আমার ছেলেকে কোলে নিতে চাইলে। কিন্তু আমি দিলাম না। তোমার চোখ দেখে বুঝতে পারলাম, তুমি ভুলে গেছ। এমন সময় দরজায় কেউ একজন করা নাড়ল। দরজা খুলেই আমি বোকা বনে গেলাম। এক দোকানি একটি খেলনা গাড়ি ও কানের এক জোড়া স্বর্ণের দুল নিয়ে দাঁড়িয়ে। গাড়িটি আমার ছেলের জন্য। আর স্বর্ণের দুল ছেলের মায়ের জন্য। আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। এ স্মৃতি কখনো ভোলার নয়। পরে জানলাম, ভুলে যাবার ভয়েই তুমি তাকে দশ দিন আগে দাম পরিশোধ করে এসেছিলে। এমন ভুলোমনা মানুষটিকে রেখে আমি কবরে গিয়েও শান্তি পাব না। তাই শেষ রাতে উঠে আমি তোমার মৃত্যু কামনা করি। তুমি যেন আমার হাতেই মর। আমি বেঁচে থেকে তোমায় বিদায় দিতে চাই।

আবেগ ঘন কথা বলতে যেয়ে রীমার চোখে পানি আসে। রীমার চোখের পানি মুছে দিয়ে সাহেদ আবার শুরু করে। তারপর আনন্দাশ্রু ছেড়ে তুমি আমায় শাসালে, ‘এতো কিছু করতে গেলে কেন?’ আমিও কম যাইনি। সাথে সাথে ফিরিয়ে দিলাম। যেজন্য একটু আগে এত রাগ দেখালে, আর এখন তা পেয়েও শাসাচ্ছ! তুমি আমাকে থামিয়ে দিয়ে আবার বললে, ‘তুমি যেমন আছ তেমনই থাক। তোমার ভুল, আমার আনন্দ। নিজের ভুল বুঝে বোকার মতো আমার দিকে চেয়ে থাক, এটা আমার আনন্দ। রাগ থেমে গেলে তোমার প্রতি মায়া বাড়তে থাকে, এটা আমার আনন্দ। শুধরে নিয়ে সেই আনন্দকে নষ্ট করে দিও না।’ সে সময় তোমার দ্বৈত আচরণে আমি অবাক হলাম। কেবল মনে হতে থাকল নারীর মন বোঝা বড় দায়। তবে তোমার কথায় আমি জীবনের অর্থ খুঁজে পেলাম। জীবন মানে হাওয়াই মিষ্টি যাকে চাপতে ইচ্ছা করে, চুষতে মন চায়। কিন্তু তা চাপলে চুপসে যায়, চুষলে মিলিয়ে যায়। আসলে চাপা, চোষার আগেই জীবনের যত স্বাদ।

দুসপ্তাহ আগে কোন এক রাতে রীমা আর সাহেদ ঘুমাবার আগে শুয়ে শুয়ে এভাবেই স্মৃতিচারণ করছিল। স্মৃতিচারণ করার ফাঁকে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গিয়েছিল। অথচ দুসপ্তাহ পর আজ সাহেদ একা ঘুমিয়ে আছে। পাশে বসে কাঁদছে রীমা। এ এক আনন্দের কান্না। জয়ী হবার কান্না। প্রিয়জনকে সসম্মানে বিদায় দিতে পারার কান্না। ছেলেদের খবর দেওয়া হয়েছে। তাদের আসতে হয়তো আরও ত্রিশ মিনিট লাগবে। এ সুযোগে রীমা অনেক কষ্ট করে সাহেদের শার্টটা বদল করে তাকে অন্য একটা শার্ট পরিয়ে দিল। রীমা খুলে নেওয়া শার্টটা নিজের আয়ত্বে গোপন করে রেখেছে। সে তার মরা স্বামীর গায়ের গন্ধ নিয়ে বাকি জীবন বাঁচতে চায়। এ শার্টের মধ্যে সে খুঁজে ফিরবে সাহেদের উপস্থিতি।

উৎসর্গ: আমার স্ত্রী, আমার বাবা-মা কে।

লেখক: শিক্ষক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ।

2 মন্তব্যগুলো

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম দিন