কবিতা : তুমি বরং অন্য ঠোঁটে চুমু খেও : জায়েদ শীতল

0

ছবি: শেখ সুজন আলী

তোমার নামের শিমুল গাছের তুলোর নরম স্পর্শ,
তোমার ঠোঁটের কথা মনে করিয়ে দিল মেঘলা ভোরে।
 
নিশ্চিন্তে আমি প্রহসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হুংকারের দীর্ঘ অবস্থান নিশ্চিত করেই
জ্যান্ত কিংবা লাশ হয়ে ফিরব বেলিরোডের বাসায়।
জ্যান্ত ফিরলে, তোমার জন্য শাহাবাগের ফুলের দোকান থেকে
গন্ধরাজের ফুল নিয়ে ফিরে তোমার ঠোঁটে চুমু খাব।
আর লাশ হয়ে ফিরলে তুমি কবরে এস মাঝে মাঝে
ফুল নিয়ে কিংবা আমার কবরের পাশে কয়টি গাঁদাফুলের গাছ, পাতাবাহারের গাছ পুঁতে দিও,
তবে গাছ বর্ষার সময় লাগিও, তোমাকে পানি দিতে আসার চিন্তা করতে হবে না তখন।
 
দেয়ালে ঝুলে থাকব
ফ্রেমের খাঁচায়, ব্যানারে, প্ল্যাকার্ডে, প্রতিবাদি গ্রাফিতিতে।
আমায় নিয়ে লেখা হবে কবিতা, কেউ কেউ বাঁধবে গান।  
আমার নামের স্মরণসভা হবে প্রতি জন্ম মৃত্যু বার্ষিকীতে।
অনুরোধ তোমায় ওসব সভায় যেও না,
ওদের মিথ্যা তোমার সহ্য হবে না।
কে জানে তোমার যে রাগ!
হয়তো টেবিলের উপরে থাকা পানি কিংবা আস্ত গ্লাসটাই ছুড়ে দিলে মুখ বরাবর কোনো এক শুদ্ধবাক বক্তার দিকে!
তোমার রাগ হতো আমার উপরে, আমার উদাসীনতার প্রতি,
সারাদিন মিছিল, প্রতিবাদ, বন্ধুর বাসায় মদ গিলে মাতাল বেশে ঘরে ফেরা,
ভুলে যেতাম তোমার সারাদিন না খেয়ে বসে থাকার গল্প।
ক্ষুধায় তোমার চোখ লাল হয়ে থাকত,
এমন চোখ লাল হয়ে থাকত যখন আমরা গাঁজা খেয়ে ঝিম ধরে বসে থাকতাম সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে,
পাশেই কেউ গান করছে পিঙ্ক ফ্লয়েড, বিটলস, কিংবা মহীনের ঘোড়াগুলি,  
তখন আমরা প্রেম করতাম আমাদের খিদে পেত না,
তখন তুমি প্রশ্ন করতে না কেন আমি বাজারের টাকা দিয়ে ব্যানার বানিয়েছি।
আমি সারাদিন মানুষ মানুষ করে চিৎকার করে মরি,
কিন্তু আমার ঘরেও এক মানুষ থাকে তার কথা ভুলে যেতাম।
মানুষের অধিকার নিয়ে এত বক্তৃতা অথচ তোমার অধিকারের বেলায় এত উদাসীন আমি।
আমি যেমন প্রতিবাদ করতাম প্রতিটি অন্যায়ের, প্রতিটি অগণতান্ত্রিক দাবির বিরুদ্ধে,
কতবার জেল খেটেছি মিথ্যা কন্সপিরেসির মামলায়।
তুমি নিজে আমায় খালাস করে নিয়ে এসেছ। 
তুমি আমার মতো এক ডিক্টেটরের ঘরে কীভাবে দাঁতে দাঁত চেপে প্রতিবাদ না করে থেকে গেলে?
নিজেরটা ছাড়া আর তোমারটা তো দেখলাম না, একটা অগণতান্ত্রিক সংসার করে গেলাম,
আর তোমাকে বাধ্য করেই রাখলাম আমার প্রেমের মায়ায়। তুমি প্রতিবাদ করলে না।
তোমার কি বলতে ইচ্ছে করেনি আই নিড জাস্টিস আই নিড জাস্টিস?
আমাকে ঘৃণা হয়নি? মনে হয়নি বিষ খাইয়ে মেরে ফেলি?
তুমি কেন একটা বন্দুক দিয়ে গুলি করে মারলে না আমায়!
এত প্রেম? নাকি মায়া? নাকি দয়া?
তুমি আবার ঘর পেত আর ভুলেও মিছিল পাগল, মানুষ পাগল, মানুষের অধিকার পাগল মানুষকে বিয়ে করোনা।
তুমি বরং এবার অন্য ঠোঁটে চুমু খেও।
তুমি বরং অন্য ঠোঁটে চুমু খেও।

লেখক: কবি ও মিডিয়া কর্মী, ঢাকা।
  

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম দিন