কবিতা: অঘটনের মূল: মাহফুজ অর্ণব

1

ছবি: শেখ সুজন আলী

যে দিনতে অনাহারে থাহন হিকছিলাম

হেদিনতেই কির‌্যা কাডছিলাম—

জীবনে কহনো খাওনরে ভালোবাসতাম না।

এই খাওনই যত্তসব ফ্যাসাদ আর অঘটনের মূল!

এই খাওনের লাইগ্যাই

মায়েরে বাপজানে মারতে মারতে

জানে মাইরা ফালাইলো!

আমার অহনো মনো আছে—

আমগো দুই ভাই—বইন,

আমি ইশকুলে যাওন শুরু হরছি

আর আমার বইনডা কতা কওন হিকতাছে।

বাপজান ঠিকমতন কামে যায় না,

এক দিন গেলে তিনদিন ঘুমাইয়া খাইয়া

পার হইর‌্যা দেয়।

আর সইন্ধ্যার বাত্তি জ্বলার লগে লগেই

দক্ষিণ পাড়ার কাসেমগোর

গুয়াইল ঘরে তাস খেলতে বয়।

মা’য় কয় তাস নাহি টেহাদ্যা খেলে

আর সব টেহা মাইনসেরে দিয়া আইয়্যে।

খাইবার আইলেই মা’য় বাপেরে কতা হুনায়,

বাপে কতা কম কয়

তয় মায়েরে মারে বেবাক।

আর কতা যেইডি কয়

অইডি হুননের লগে লগে

মাইনসে ঘরের দুয়ারে আইয়্যা ভীড় জমায়।

হেই দিন বাপজানে

তাস খেইল্যা মেলা রাইতে বাইত আইলো

মায়েরে খাওন বাইরা দিবার কইলো।

মায়ে কইলো ‘খাওন কিছু নাই,

কামে যাওনা আইজ্যা চাইর দিন,

খাওন আইবো কইত্তে’?

কতাডা কওনের লগে লগে

বাপে মায়েরে খুব খারাপ

একটা বহা দিলো।

মায়েরে বহা দেওনে

মনডাত খুব রাগ পাইলো।

এইহানি বুঝি—

মায়েরে হুদাই বকতাছে!

হুতাত্তে উইড্যা

মায়ের বুগলো গিয়া কইলাম—

‘মা তুমি না কইছিলা

বাপজান খাওন লইয়া আইবো

এলা খাওন দেও,

মেলা ভুক নাগছে’।

মা’য় বাপেরে চিল্লাইয়া কইলো

‘জরমো দিছোস খাওন দিবার পারছ না ক্যা,

মোরাদ নাইক্যা তে বিয়া করছিলি ক্যা’?

বাপে কোনো কতা না কইয়া

দুয়ারের বারাত্তে

কুপি বাত্তির কাঠডা উডাইয়া

মায়ের মুহের উপরে মিইল্যা মারলো!

মায়ের নাক ফাইড্যা

চিলিক মাইর‌্যা রক্ত বাইর অইতে লাগলো!

আমি কিছু না বুইজ্যাই

চিল্লাইয়া কান্দুন শুরু হরলাম।

আমার কান্দা হুইন্যা

বইনডাও উইড্যা কানতে লাগলো।

আমগোর দুইজনের কান্দা হুইন্যা

বাড়ির বেহেই আইয়্যা জমা অইছে,

বেহেই মিল্যা মায়েরে

ঘরের বাইরে লইয়া গিয়া

মাতার মাইধ্যে পানি দিতে লাগলো।

সুজনের মা’য় কয় ‘দাঁতি লাগছে

এল্লাইগ্যা কতা কয় না,

মুহো চামিছ দে’।

কফিলের বাহে অসুদের দুহান বন্দ হইর‌্যা

বাইত যাওনের সময়,

সুজনের বাহে ডাক দিয়া আনছে

মায়েরে দেইক্যা যাওনের লাইগ্যা।

কালাম কাহায় মায়ের আতের কবজিত দইর‌্যা

কি যানি কইর‌্যা কইলো

মা’য় আর বাইচ্চা নাই!

যেই আহাল খাওনের লাইগ্যা

আমার মা’য় মরলো

হেই খাওনের উপরে আমার

কোনো ভালোবাসা নাই।

লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, জাককানইবি।

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম দিন