আরাফাতুর রাহমান।। প্রবন্ধ।। সৃজনশীল শিল্পকলার আবশ্যকতা ও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এর ভুমিকা

0

আর্টওয়ার্ক: নগরবাসী বর্মন

সৃজনশীল শিল্পকলা হলো মানুষের অন্তর্গত অনুভূতি বহিঃপ্রকাশের একটি মাধ্যম বা প্রক্রিয়া যা মানব মনের অভ্যন্তরীণ অবেগকে প্ররিস্ফুটিত করে। সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ বিভিন্ন উপায়ে নিজের অন্তর্গত চেতনা ও স্বপ্নকে প্রকাশ করতে চেয়েছে। এই ব্যাকুলেচ্ছা ও নিজেকে প্রকাশের তীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকেই শিল্পকলার সৃষ্টি। অর্থাৎ মানব মননের নান্দনিক বহিঃপ্রকাশ হিসেবে যে সব মাধ্যম জনসমক্ষে উপস্থাপিত হয়েছে তাই শিল্পকলার অধিভুক্ত। বিংশ শতাব্দীতে কলার প্রধান শাখা হিসেবে নয়টি বিদ্যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যথা- স্থাপত্য, ভাস্কর্য, নৃত্য, সংগীত, চিত্রকলা, কাব্য (সাহিত্যের একটি অংশ যার মধ্যে নাটক, উপন্যাসও অন্তর্ভুক্ত), চলচিত্র, গ্রাফিক আর্ট ও ফটোগ্রাফি। যার প্রত্যেকটি শাখা’ই শিল্প স্রষ্টার চিন্তা চেতনা, মানসিক উৎকর্ষ, দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃজনশীলতার সম্মিলন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- বাংলাদেশের প্রাতিষ্টানিক শিক্ষা ব্যবস্থা সৃজনশীল শিল্পকলা বিকাশে কিংবা শিক্ষার্থীর মননের উৎকর্ষতার বিকাশে সহায়ক কিনা? বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থায় সৃজনশীল শিল্পকলার বিষয়গুলিকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হয় কিনা? অথবা শিল্পের এই মাধ্যমগুলি পেশা হিসেবে সামাজিকভাবে স্বীকৃত কিনা? এর প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর- না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোন অভিভাবকই চান না তার ছেলে/মেয়ে চারুকলা, সঙ্গীত কিংবা সাহিত্যে পড়াশোনা করুক। কারন আমাদের সমাজে সাফল্যের মানদন্ড কোন পেশায় বেশী টাকা আয় করা যায়। এক্ষেত্রে প্রত্যেক অভিভাবকই চায় তার ছেলে/মেয়ে যেন ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হয়। তাই পারিবারিকভাবেই এইসব শিল্পকলার মাধ্যমগুলিকে নিরুৎসাহিত করা হয়। ঠিক একইভাবে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও সৃজনশীল শিল্পকলাকে প্রাতিষ্টানিকভাবেই অবহেলা করা হচ্ছে।  

প্রকৃতপক্ষে-শিল্পকলা চর্চা ব্যাতিত একটি জাতির সংস্কৃতিবান হওয়া কঠিন। একজন শিল্পিত ব্যক্তি তার সৃজনশীল শিল্পের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে তার জাতিকে উপস্থাপন করে। প্রতিটি শিল্পকলা তার সমাজ ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কযুক্ত। শিল্প স্রষ্টার চিন্তাচেতনা, মূল্যবোধ, আকাঙ্ক্ষা বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয়। অথচ, বর্তমান সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থা একটা রুচিহীন শিল্পবিমুখ জাতি গঠনে অগ্রনি ভুমিকা পালন করছে। এ প্রসঙ্গে শিল্প সমালোচক কেনেথ ক্লার্ক বলেছেন- “সমাজের বৃহত্তর অংশের সাথে শিল্পের সুস্থ ও স্বাভাবিক সম্পর্ক তখনই পাওয়া যেতে পারে, যদি জনগনের শিক্ষা, বুদ্ধিবৃত্তির মান বা গ্রহন করার ক্ষমতা একটি বিশেষ পর্যায় লাভ করে। কিংবা মানুষ যদি মনে করে শিল্প তাদের নিজেদের চাহিদা ও প্রয়োজনের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে” । কিন্তু স্বাধীনতার চার দশক পরেও আমরা সেই রুচিশীল শিল্পিত জাতি গঠন করতে পারিনি। পারিনি- শিল্পকলার প্রাতিষ্টানিক চর্চার উন্মেষ ঘটাতে। ব্যক্তিক পর্যায়ে শিল্পের চর্চা মানুষকে অপার্থিব সুখের সন্ধান দেয়। সাধরানত আমরা শারীরিক সুস্থতার প্রতি যতটা মনযোগী, তার সিকি ভাগ গুরুত্বও মানসিক সুস্থতাকে দেই না। কিন্তু শরীরকে চালায় যে মন, সেই মনের খাবারই হচ্ছে শিল্পকলা; তার জন্যে কিছুই করি না!   

শিল্পকলাবিমূখ মানুষ তার যাপিত জীবনে বেঁচে থাকে বটে, কিন্তু জীবনকে উৎসব বানিয়ে উদযাপন করতে পারে না। আবার, একজন সৃষ্টিশীল মানুষের শিল্পকর্ম তার মৃত্যুর পরেও তার প্রতিনিধিত্ব করে। শিল্প স্রষ্টার জাগতিক মৃত্য হলেও যুগের পর যুগ মানুষের মুখে মুখে তার নাম রয়ে যায়। শুধুমাত্র একটি মহৎ সৃষ্টিই আপনাকে এনে দিতে পারে অমরত্ব। এর উদাহারনের জন্যে খুব বেশী দূরে যেতে হবে না। এক্ষেত্রে,  বাংলাদেশের দুজন কিংবদন্তীর নাম বলা যেতে পারে; দুজনেই এখনো বেঁচে আছেন। প্রথমজন- কবি হেলাল হাফিজ, যার ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতার দুটি লাইন মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববতী উনসত্তরের গন আন্দোলনের সময় ঢাকা শহরের দেয়ালে দেয়ালে চিকা হিসেবে স্থান করে নিয়েছিল। “এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়”। এই কবিতা ছাপানোর জন্যে আহমদ ছফা- হেলাল হাফিজকে নিয়ে গিয়েছিলেন তৎকালীন দৈনিক পাকিস্থানের সাহিত্য সম্পাদক কবি আহসান হাবীবের কাছে; তিনি কবিতাটি পড়ে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আর বলেছিলেন-“তোমার এ কবিতা ছাপাতে পারলাম না বলে আমার আজীবন দুঃখ থাকবে। তবে আমি বলছি- এ কবিতা লেখার পর তোমার আর কবিতা না লিখলেও চলবে ”। মিছিলে, স্লোগানে সর্বাধিক উচ্চারিত এই কবিতার জন্যে বাঙ্গালীর হৃদয়ে আজীবন বেঁচে থাকবেন কবি হেলাল হাফিজ। অপরজন- বিশিষ্ট কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী, ব্যক্তি হিসেবে তিনি যতই বিতর্কিত হোন না কেন! “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি ” এই গানের রচয়িতা হিসেবে বাঙ্গালী জাতি তাকে আজীবন মনে রাখতে বাধ্য। আর এখনেই শিল্পচর্চার সৌন্দর্য, এভাবেই শিল্প স্রষ্টা অমর হয়ে ঊঠেন তার শিল্পের মধ্য দিয়ে; এবং তাদের সৃষ্টি হয়ে উঠে সার্বজনিন ও নিজ জাতির মনোজগতের সম্পত্তি।    

একজন শিল্পিত মানুষ তার মনের গভীরে প্রবেশ করেই শিল্পের নান্দনিকতার উৎস খুঁজে, তারপর সেই অনুভূতির বাস্তবিক রূপ প্রদান করেন। তার মধ্যে নিজেকে জানার ও নিজের অফুরন্ত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের একটা অদম্য স্পৃহা তাকে প্রতিনিয়ত আগুনের প্রজ্বলিত শিখার মতই পোড়ায়। এই আগুন ক্রমাগত তার মনকে শুদ্ধতা থেকে অতি শুদ্ধতার পথে ধাবিত করে। ভয়, সংশয়, দুঃচিন্তা প্রভৃতি খুব সহজেই একজন শিল্পিত সৃজনশীল মানুষের আয়ত্বে এসে যায় এবং শিল্পচর্চা তার মনের জমিনকে এমনই উর্বর করে দেয় যে- জীবনের কঠিন সময়গুলি এই জীবনের স্পর্শে এসেই পরাজিত হয়। এজন্যেই একজন শিল্পিত মানুষ তার এক টুকরো আনন্দকে উদযাপন করে আর দুঃসময়কে বানায় তার শিক্ষার আধার। ভক্তিপূর্ণ হৃদয় নিয়েই নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে শিল্পের কাছে।  তার সৃজনশীলতা দিয়েই অন্যদের চিত্তবিনোদনের নিত্য নতুন পথ উন্মোচন করেন।  

আমার মাধ্যমিক স্কুলের একজন শিক্ষক তার কোন এক প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারায় আক্ষেপ করে বলেছিলেন- “প্রাইমারি স্কুল, তোমাদের প্রায়’ই মেরে ফেলেছে”। প্রাইমারি স্কুলের প্রায়’ই মেরে সেই শিক্ষার্থীকে মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কতটুকু বাঁচিয়ে তুলতে পেরেছে? উল্লেখ্য যে, প্রশ্নটি বুদ্ধিবৃত্তিক ছিল। আমাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনমুখি শিক্ষার নামে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। এ প্রতিযোগিতা অনেক ক্ষেত্রেই সার্টিফিকেট মুখি। বলছিনা এই সিস্টেম হুট করে পরিবর্তন করতে হবে কিংবা চাইলেও এটা রাতারাতি পরিবর্তন করা সম্ভব না। কিন্তু একটু সচেতন হলেই এই শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেই সৃজনশীলতার চর্চা সম্ভব। স্কুলে কিংবা কলেজে একটি মাসিক অথবা ত্রৈমাসিক দেয়াল পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা করা খুব অসম্ভব কিছু না! এতে শিক্ষার্থীরা লেখালেখির সুযোগ পেত এবং তাদের সাহিত্যের প্রতি একটা অগ্রহ তৈরি হতো। স্কুল ও কলেজ জীবনেই একজন শিক্ষার্থীর রুচি, মননশীলতা ও ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠে। এই শিক্ষার্থীর মনে একবার যদি সাহিত্যের বীজ বুনে দেয়া যায়, তাহলে তাদের সামনে সাহিত্যের বিশাল দরজা উন্মোচিত হয়ে যেত। কিন্তু এই উদ্যোগ নেয়ার মত শিল্পভাবাপন্ন ও সাহিত্যমনা শিক্ষক বেশীরভাগ স্কুল, কলেজেই নেই। ইংরেজী ও গণিতের জন্যে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ করা হলেও প্রায় স্কুল, কলেজেই অযোগ্যদের দিয়েই বাংলা নামক বিষয়টি পড়ানো হয়। এরা কিভাবে শিক্ষার্থীর মনে ঢুকিয়ে দেবে- কিভাবে কাব্য রস আস্বাদন করতে হয় অথবা একটা গল্প লেখার সামাজিক ও রাজনৈতিক পেক্ষাপট? এরা পড়ায় পরীক্ষা পাশের জন্যে। ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থীদের মনে সাহিত্যের প্রতি একটা বিতৃষ্ণা জন্ম নেয়, যা অঙ্কুরোধগমেই ধ্বংস করে দিচ্ছে একজন শিক্ষার্থীর সৃষ্টিশীলতা ও কল্পনার রাজ্যে অবগাহনের অপার সম্ভাবনা। সাহিত্যের পাশাপাশি স্কুল, কলেজে প্রাতিষ্টানিক ভাবেই নিরুৎসাহিত করা হয়েছে চিত্রকলা ও সংগীতকেও। সামাজিকভাবে ছবি আঁকা -হারাম (ইসলামে নিষেধ আছে) এবং সংগীত চর্চা হিন্দুয়ানি রীতি,  এমন প্রচারনাও চালাতে দেখা যায় প্রতিক্রিয়াশীলদের।

যে সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থায় সৃজনশীল শিল্পকলাকে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবেই অবদমিত করে রাখা হয়, সে সমাজে সৃষ্টিশীল মানুষ জন্ম নেয় না। আর জন্মালেও উপযুক্ত পরিবেশ ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিকশিত হয় না তার অমিত সম্ভাবনা। তবুও, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক শিল্পচর্চার পরিবেশের কারনে আমাদের দেশে শিল্পচর্চা অব্যাহত রয়েছে। এর কৃতিত্ব একান্তই শিল্পবোধ সম্পন্ন গৃহকর্তার অথবা একজন সৃজনশীল ব্যক্তির হার না মানা অদম্য স্পৃহার। রাষ্ট্র, শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজের এতে কোন ভুমিকা নেই বললেই চলে। কিন্তু জাতির ক্রান্তিকালে শিল্পকলা ঠিকই তার অগ্রনি ভুমিকাটাই রেখেছে। যেমন- মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীল সময়ে মুক্তিযুদ্ধাদের একমাত্র বিনোদনের উৎস ছিল “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের” গান ও এম. আর. আখতার মুকুলের “চরমপত্র”। এই সময়ে মুক্তিযুদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করার জন্যে প্রচুর গান লেখা ও সংগীতায়োজন করা হয়েছে যা বাঙ্গালী জাতির সংগীত ইতিহসে অন্যতম শ্রেষ্ট সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এম. আর. আখতার মুকুলের ব্যাঙ্গ রসাত্মক উপস্থাপনা এখনো মুক্তিযুদ্ধাদের স্মৃতিতে অবিনশ্বর। যা যুদ্ধকালীন সময়ে অনুপ্রাণিত  করেছিল মুক্তিযুদ্ধাদের। কবি, সাহিত্যিকরা স্বনামে বেনামে লিখে গেছেন কবিতা ও প্রবন্ধ। মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী গন আন্দোলনের সময়ে “দৈনিক ইত্তেফাক” গনজাগরনে যে ভূমিকা রেখেছিল তা কেঊ অস্বীকার করতে পারবে না। আমরা অনেকেই জানিনা- ১৯৭১ সালের ২৩শে মার্চ ‘পাকিস্থান দিবসে’ বিটিভি তে (তৎকালীন পাকিস্থান টিভির পুর্ব-পাকিস্থান সম্প্রচার কেন্দ্র) পাকিস্থানের জাতীয় সংগীত প্রচার করা হয় নি। তখন, রাষ্ট্রীয় টিভির অনুষ্ঠান শেষে পাকিস্থানের জাতীয় সংগীত বাজানোর রেওয়াজ ছিল। প্রোগ্রাম ম্যানেজার চিত্রশিল্পী মোস্তফা মনোয়ার চাননি পাকিস্তান দিবসে এই জাতীয় সংগীত বাজুক। এজন্য তিনি ২৩শে মার্চ রাত সাড়ে দশটায় অনুষ্ঠান শেষ না করে, শেষ করেছিলেন রাত বারটার পরে; মানে ২৪শে মার্চ বারটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে। তার অবস্থান থেকে পাকিস্থান দিবসে জাতীয় সংগীত না বাজানোটাই ছিল প্রতিবাদ। এরপর, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্থানি মিডিয়া যখন মুক্তিযুদ্ধকে অভ্যন্তরীণ গন্ডগোল বলে  প্রচার করছিল, তখন জহির রায়হান “স্টপ জেনোসাইড” নামে প্রামাণ্যচিত্র নির্মান করে সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্থানি সেনাবাহিনীর নৃসংশ হত্যাযজ্ঞ। আবার, যুদ্ধ পরবর্তী সামরিক শাসনের আমলে যখন রাজাকারেরা একে একে রাষ্ট্রীয় বদন্যতায় পুনর্বাসিত হচ্ছিল, তখন এক অভিনব উপায়ে এর প্রতিবাদ করেছিলেন কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ। তিনি তার ‘বহুব্রীহি’ নাটকে তোতা পাখিকে দিয়েই বলালেন-“তুই রাজাকার” সংলাপটা। এমন প্রতিবাদ একমাত্র একজন সৃজনশীল শিল্পস্রষ্টার পক্ষেই করা সম্ভব। এভাবেই জাতির ক্রান্তিকালে স্ব-স্ব অবস্থান থেকেই সৃজনশীল ব্যক্তিগন নিজ নিজ শিল্পকলার মাধ্যমেই ঋদ্ধ করেছেন জাতিকে।  

পরিতাপের বিষয় এই যে- যে শিল্পকলা একজন মানুষকে তার অন্তর্নিহিত শক্তি ও সম্ভাবনাকে জাগ্রত করে তার সুকুমার বৃত্তিগুলির উন্মেষ ঘটায়; সেই শিল্পকলা বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে নিগৃহীত হয়েছে প্রতিনিয়ত। অথচ, ব্যক্তির মানসিক উন্নয়নের সাথে সামাজের সামষ্টিক উন্নয়ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ফলশ্রুতিতে, সমাজে নেতৃত্বের প্রতিটি স্থলে রুচিহীন শ্রেনীর দৈরাত্ব লক্ষণীয়; যাদের জাতীয় স্বার্থ বিসর্জনেও বিন্দুমাত্র বিচলিত হতে দেখা যায় না!  হয়তো, এই জন্যেই কবি শামসুর রাহমান লিখেছিলেন “উদ্ভট উঠের পিঠে চলেছে স্বদেশ”।

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম দিন