মনির-উজ-জামান।। প্রবন্ধ।। তেতো বৃক্ষের অমৃত ফল

0

আর্টওয়ার্ক: নগরবাসী বর্মন

অলেখক যদি লিখিতে বসে তাহা হইলে বাদে গন্ডগোল। আমি পাঠক, লেখক নহে। গ্রন্থালোচনায় দু’এক কথা কইতে পারি। কিন্তু লিখিতে পারি না। যেহেতু পাঠক হিসেবে দু’এক কথা কইতে পারি ইহার লাগিয়া আমি কথক হইতে পারি লেখক নহে। চিন্তাবিদ, লেখক নাহিদুল ইসলাম স্যার যবে আমার মতো অলেখককে লেখকের আসনে বসাইয়া দিলেন তখন অনুরোধে ঢেঁকি গিলিবার ছাড়া আর কিছুই করিবার নাই। অলেখক দুই কলম লিখিতে বসিয়া এক কলম হারাইয়া ফেলিয়াছে। এক কলমে যে পরিমান কালি আছে তাহা দিয়াই লিখিতেছি। আমাদের পরিবার, আমাদের সমাজ, আমাদের রাষ্ট্র চায় না কেহ মহৎ হওক। সে চায় না কেহ অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উচুঁ করিয়া কথা বলুক। জগতের যেইস্থলে মহৎ শক্তির প্রকাশ ঘটিবে সেইস্থলেই শুরু হইবে অত্যাচার-নির্যাতন। এই অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করিয়া সম্পূর্ণ বিপরীত পরিবেশে শির উচুঁ করিয়া কথা কইতে হইলে কি পরিমাণ শক্তি, কি পরিমাণ ধৈর্য, কি পরিমাণ সাহসের দরকার তাহাই আমরা মহান মনীষীর জীবনীতে দেখিব। সমাজের, রাষ্ট্রের চাপাইয়া দেওয়া বিধানে জীবন হইয়া উঠে দুর্বিষহ। চাপাইয়া দেওয়া বিধানে জীবন সংকুচিত হইয়া যায়। জীবনবোধ জীবন হইতে হারাইয়া যায়। বিধানের চার দেওয়াল ভাঙ্গিয়া কি প্রকারে বাহিরে আসিয়া মানুষের জয়গান গাইতে হয় তাহাও এই তেতো মনীষার জীবনীতে পাইব।

     গোর্কির নামখানা স্মরণ হইতেই মনে হইল তাহার সম্পর্কে দু’এক কথা লিখি। অলেখক লিখিতে বসিয়া ভাবিলাম গোর্কির সাহিত্য লইয়া লিখিব নাকি গোর্কিকে লইয়া লিখিব? একজন সাহিত্যিক নিশ্চয় তাহার সাহিত্য কর্মের চাইতে মহৎ। এহেন কথা ভাবিয়া গোর্কি সম্পর্কে ক্ষুদ্র নিবন্ধ লিখিব বলিয়া স্থির করিলাম।

 গোর্কি লিখিয়াছেন, “সাহিত্যিকের কর্তব্য হইল ব্যক্তিকে নাড়া দেওয়া, যেন সে তার ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের চার দেওয়ালের বাহিরে আসিতে পারে”।

এই পর্যায়ে আনাতোলি লুনার্চাস্কির কথা বলিলে হয়তো বেশি বলা হইবে না বরং কম বলা হইবে। রুশ শিক্ষাবিদ আনাতোলি লুনার্চাস্কি শিক্ষার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত এবং শিক্ষার মূল লক্ষ্য হিসেবে ভাবিতেন , ‘ব্যক্তির স¦কীয়তার সর্বতোমুখী বিকাশ সাধন’ । তিনি আরও বলিতেন, সমাজে ব্যক্তিই চরম সত্তা।

     মহাকাব্যে আমরা আমাদের জীবনের স্বাদ উপভোগ করিয়া থাকি। মহাকাব্য আমাদের বীরত্বের সহিত কাপুরুষতা, সৃষ্টির সহিত ধ্বংস , আনন্দের সহিত বেদনা, বর্বরতার সহিত মহানুভতার ধারনা দিয়া থাকে। মহাপুরুষ মাত্রই যে মহাকাব্য রচনা করিবেন এমন কোন কথা নহে, কিন্তু কথা হইল মহান মানুষ স্বয়ং নিজেরাই মহাকাব্য।

     আলেক্সেই পেশকভের জন্ম ১৮৬৮ সনের ২৮শে মার্চ। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি বাবাকে হারান। ছ’বছরে পা দিতে না দিতেই জীবন বাঁচাইবার লাগিয়া হেন কর্ম নাই যিনি করেন নাই। উনিশ বছরে পা রাখিয়া তিনি দেখিলেন তাহার জীবন তেতো বিষ বৈ অন্যকিছু নহে। তখন তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করিলেন । কিন্তু অলৌকিকভাবে বাঁচিয়া যান । তাহার এই নব-জীবনের নব-উদ্যমই ছিল লেখালেখির গোড়াপত্তন। ধারন করিলেন নতুন নাম ম্যাক্সিম গোর্কি। রুশ ভষায় ‘ম্যাক্সিম’ অর্থ ‘সর্বাধিক’ এবং ‘গোকির্’ অর্থ ‘তেতো’। কি করিয়া তাহার জীবন এতো তেতো হইল ইহাও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অনুসন্ধান করিয়া দেখিবার বিষয়। একজন ফিলিস্তিনি মার্কিন তাত্তি¡ক ও বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদ মহাশয়ের ভাষায়, “A university contemplates neither moral impression nor mechanical production; it professes to exercise the mind neither in art nor in duty; its function is intellectual culture; here it may leave its scholars, and its has done its work when it has done as much as this”.  -Adward Said      

তেতো বৃক্ষে যে অমৃতের ফসল ফলে ইহার আরেক নজির মহাত্মা গোর্কি।  তিনি উপাখ্যানের নীলকন্ঠের মতো জীবনের সমগ্র বিষ পান করিয়া আমাদের জন্য রাখিলেন অমৃত। তিনি বলিয়াছেন,

       “চাহিয়া দেখ মানুষের দিকে, কি বিষ্ময়কর আর কি সুন্দর । অন্তহীন দিগন্তের পানে এ যেন এক পক্ষযাত্রী। সেই আদিকাল হইতে যাত্রা শুরু করিয়াছে , কতো ঝড়-ঝঞা, সংস্কার, ভ্রান্তির কুয়াশা ভেদ করিয়া এই পথিক অগ্রসর হইতেছে। গতি তাহার শ্লত হইতে পারে কিন্তু উঁচু তাহার শির। সম্মুখে তাহার জটিল জিজ্ঞাসা”।

        ১৯০০ সনের দিকে তিনি যখন মহান মনীষী টলস্টয়ের সহিত সাক্ষাৎ করিতে গিয়াছিলেন তখন তাহার বয়স ছিল বত্রিশ । টলস্টয়কে উপহার হিসেবে দিয়াছিলেন নিজের কিছু রচনা। ফিরিয়া আসিয়া চাতকের মতো অপেক্ষা  করিতে লাগিলেন মহান মনীষীর পত্রের লাগিয়া। কয়েক দিবস পর আসিল এক পত্র, টলস্টয় লিখেছেন ,

          “প্রিয় আলেক্সী পেশকভ, আপনার লেখা আমার ভালো লাগিয়াছে; কিন্তু তার চেয়েও ভালো লাগিয়াছে আপনাকে”।

কম কথায় যদি বুঝাইতে চাই ,পত্রোত্তরে গোর্কি লিখিয়াছেন,                                           

 “প্রিয় লিও নিকোলায়েভিস ,আপনি আমাকে আপনার যে ছবিখানা পাঠিয়েছেন এবং আমাকে প্রশংসা করিয়া যে কথা লিখিয়াছেন তাহার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমার রচনার চাইতে আমি ভালো-কিনা তাহা আমি জানি নে, কিন্তু এ কথা হলফ করিয়া বলিতে পারি, লেখকমাত্র’ই তাহার নিজের রচনার চাইতে, নিজের বইয়ের চাইতে উত্তম হইতে হইবে…..।

আমার জীবনের সব সময়’ই আমি মানুষকে পুজা করিয়া আসিয়াছি। আমৃত্যু তাহাকেই পুজা করিব । মানুষই আমার দেবতা। কিন্তু আমার ভাষা নাই কেমন করিয়া আমার এই অনুভূতিকে ভালো করিয়া, জোরের সহিত বলিতে হইবে তাহা আমি জানিনা ”। এই স্থলে মহাত্মা নজরুল ইসলামের কথা স্মর্তব্য ,

             “মানুষেরে ঘৃর্ণা করি

              ও কারা কোরাণ ,বেদ, বাইবেল  চুম্বিছে মরি মরি !

              ,,,মূর্খরা সব শোন ,

              মানুষ এনেছে গ্রন্থ ; গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোন” ।

      গোর্কির স্মৃতিকথা  পাঠ করিলে লেনিনের সহিত তাহার মতামতের যে পার্থক্য দাড়াঁইয়াছিল তাহা জানা যায়।                                              

      “কথায় কথায় লেনিন উত্তেজিত হইয়া পড়িলেন । এবার তিনি বসিয়া পড়িলেন, হাত দিয়া কপালের ঘাম মুছিলেন, যে চা ঠান্ডা হইয়া গিয়াছিল তাহা পান করিলেন, ইহার পর হঠাৎ জিজ্ঞাসা করিলেন; আরে আপনার আমেরিকার ব্যাপারটা বয়ান করেন শুনি। আমি কিছু খবরের কাগজে পড়িয়াছি বটে; কিন্তু কি করিয়া ব্যাপারটা ঘটিল?  

   আমি সংক্ষেপে আমার আমেরিকা ভ্রমনের কাহিনী বয়ান করিলাম। সে কাহিনী শ্রবণ করিয়া লেনিন সাহেব শিশুর মতো হাসিয়া ফাটিয়া পড়িতে লাগিলেন। এ এক আশ্চর্য হাসি। ইহার পর তিনি আমায় লক্ষ্য করিয়া বলিলেন: আপনি সত্যিই রসিক। আমি কোনদিন ভাবিনাই আপনার এরূপ অসম্ভব রসবোধের ক্ষমতা রহিয়াছে ,,,,,। সত্যিকার অর্থে বলিতে গেলে জীবনটা মজার বটে। এতে যত দুঃখ, তত মজা, তত কৌতুক ”।

       সোভিয়েত দেশের বর্তমান রাশিয়ায় গোর্কি-গবেষকদের মতে গোর্কি মহাশয়ের যেসব চিঠি রক্ষা করা হইয়াছে তাহার সংখ্যা প্রায় কুঁড়ি হাজারের মতো। রুশ বিপ্লবের আগে কিংবা পরে য়ুরোপ খন্ডের এমন কোন মনীষী ছিলেন না যাহার সহিত গোর্কি মহাশয় পত্রালাপ করেন নাই। কত সহস্র লেখক তাহার নিকট আসিয়াছেন সাহিত্যের সবক লইতে, কতো লেখক আসিয়াছেন নিজের পান্ডুলিপি পরিক্ষা করাইতে ইহার কোন ইয়াত্তা নাই।

   এই স্থলে মহান মনীষী আন্তন চেখভের সহিত গোর্কির পত্রালাপের কথা কওয়া যায়। মহৎশিল্পী আন্তন চেখভের সহিত গোর্কির ছিল খুবই ঘনিষ্ট সম্পর্ক । পারস্পারিক পত্রবিনিময়ের কতো চিহ্ন ভরিয়া আছে গোর্কির জীবনে। গোর্কি দেখিলেন নাটকে মানুষের জীবন লইয়া চেখভ মহাশয় নাটকিপনা করেন নাই। তাহার নাটকে মানুষের জীবনের চরিত্র যেমন ঠিক সেইরূপ চরিত্রই ভাসিয়া ওঠে। দর্শক সেই চরিত্র দেখিয়া নিজের দিকে তাকায় বিষ্ময়ের চোখে, করুণার চোখে, ভালোবাসার চোখে ইহার সহিত বলিতে থাকেন, এই আমার জীবন, এই আমাদের জীবন!

      ১৮৮৬ সনে আন্তন চেখভের নাটক ”আঙ্কল ভানিয়া” দেখিয়া গোর্কি মুগ্ধ হইয়া চেখভকে একখানা পত্র লিখিলেন। পত্রখানা যদি পাঠ করি,

“প্রিয় আন্তন পাভলোভিচ! আপনি আমার চিঠির জবাব দিয়াছেন এবং বলিয়াছেন আবার আমায় লিখিবেন। ইহার লাগিয়া আপনি অপরিসীম ধন্যবাদ গ্রহন করিবেন। আপনার চিঠি এবং ইহার সহিত আমার গল্পগুলো সম্পর্কে  আপনার মতামতের জন্য আমি অধির আগ্রহ লইয়া অপেক্ষায় থাকিব। সেদিন আমি আপনার ‘আঙ্কল ভানিয়া’কে দেখিয়াছি। আমি তাহাকে দেখিয়াছি আর কাঁদিয়াছি।  দস্তুরমতো মেয়েছেলের মতো কাঁদিয়াছি। অথচ আমি যে খুব অনুভূতিপ্রবন, তা তো নহে। ‘আঙ্কল ভানিয়া’কে দেখিয়া যবে ঘরে ফিরিলাম তখন আমি অভিভূত হইলাম।  ‘আঙ্কল ভানিয়া’র দৃশ্য যেন আমাকে মরমে মারিয়া  ফেলেছে; আমার সত্তাকে বিলুপ্ত  করিয়া দিয়াছে। ঘরে ফিরিয়া আমি আপনাকে চিঠি লিখিতে বসিলাম। লিখিলাম এক দীর্ঘ চিঠি। ইহার পর তাহা আমি ছিঁড়িয়া ফেলিয়াছি। সহজভাবে পরিষ্কার করিয়া বলি, আপনার এই নাটক গভীরভাবে একজন দর্শককে আলোড়িত করিয়া তুলিতে পারে। ‘আঙ্কল ভানিয়া’কে আমি যত দেখিতে লাগিলাম ততই যেন আমার মনে হইতে লাগিল, কে যেন একখানা ভোঁতা করাত দিয়া নির্মমভাবে আমার সত্তাকে দ্বিখন্ডিত করিয়া চলেছে। করাতের দাঁতগুলো আমার বুকের মাঝখানটাতে বসিয়া যাইতেছে। নিচে অন্তরটা শিউরিয়া উঠিতেছে, ডুকরে কাঁদিতেছে আর ফাঁকা হইয়া যাইতেছে। ইহা এক অদ্ভুত অনুভূতি। আমার নিকট ‘আঙ্কল ভানিয়া’কে নাট্যশিল্পের এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত বলিয়া মনে হয়। মানুষের ফাঁকা মস্তকের উপর হাতুড়ির কি নির্মম আঘাত। ‘আঙ্কল ভানিয়া’র শেষ অঙ্কের সেই দৃশ্যটি আমার চোখে এখনও ভাসিতেছে।,,, কথার বিরাম হইয়াছে অনেক্ষণ, যেন এক শূন্যতা বিরাজ করিতেছে মঞ্চে। ইহার পর ডাক্তার মহাশয়, আফ্রিকার ভয়ানক গরমের কথা বয়ান করিলেন। ,,, আমার চোখে ভাসিয়া উঠিল আমাদের জীবন, মানুষের জীবন, এ জীবন ধূসর বর্ণহীন, বৈচিত্রহীন, পঙ্কিল। আমার ভয় লাগিল, প্রশ্ন জাগিল মনে, তাহা হইলে কি করিব এই জীবন লইয়া? আত্মার উপর আপনার কি শক্তিশালী আঘাত! কি সাংঘাতিক রকমের সঠিক আপনার আঘাতের লক্ষ্য, আর কি অব্যর্থ! প্রিয় আন্তন! কি অদ্ভুত আপনার শক্তি। কিন্তু আমার আরেকখানা প্রশ্ন, এই আঘাতে কি হইবে? মানুষের মৃত আত্মা কি জাগিয়া উঠিবে? আমাদের এই জীবন করুণা করিবার জীবন। ইহা অসত্য নহে। আমরা কি মানুষ! নির্বোধ, নোংরা, বিসদৃশ।এ মানুষকে ভালোবাসিতে, করুণা করিতে এবং সাহায্য করিতে অমানসিক ক্ষমতার আবশ্যক ইহা আমি বুঝি।আমি ‘ভানিয়া’কে যবে দেখিলাম, দেখিলামতাহারই মতো আর মানুষের জীবনকে। তখন চোখ ফেটে এল আমার কান্না। দুঃখে সহানুভূতিতে।”

এই হইল গোর্কির জীবনদর্শন। পরের তরে নিজেরে বিলাইয়া দেওয়া। আহা কেমন করিয়া বলিব এমন মহামানবের কথা। বলিতে গেলে কন্ঠ রুদ্ধ হইয়া যায়। লিখিতে গেলে কলম থামিয়া যায়। স্মরণ হইলে চোখ অশ্রুসিক্ত হইয়া যায়। এই মনীষী তিক্ত হইয়াছেন আমাদের লাগিয়া, আমাদের সমাজের লাগিয়া, আমাদের রাষ্ট্রের লাগিয়া। তিনি কি করিয়াছেন? তিনি কি সাম্রাজ্যবাদীদের মতো কলোনি সৃষ্টির কথা বলিয়াছেন? তিনি কি বর্বরদের মতো দেশে-দেশে হত্যা-কান্ড চালিয়েছেন? তিনি মানুষকে অত্যাচারির খর্গ-কৃপান হইতে বাঁচাইবার লাগিয়া কাজ করিয়াছেন। যাহা কিছু মহৎ, যাহা কিছু কল্যাণকর, তাহাই তিনি মানুষের লাগিয়া করিয়াছেন। এহেন কর্মই কি সা¤্রাজ্যবাদীদের ভাষায় অপকর্ম? তাহাদের ভাষায় কি বিখ্যাত গ্রন্থ “মা”, ÒThe Wretched of the Earth” অপুস্তক?  

গোর্কির টলস্টয়কে দেখিবার অনুভূতির কথা বয়ান করিয়া আমার ক্ষুদ্র নিবন্ধের ইতি টানিব। ১৯০০ সনের গোড়ার দিকে গোর্কি দেখিতে গিয়াছিলেন টলস্টয়কে। ফিরিয়া আসিয়া চেখভকে লিখিলেন,

“প্রিয় আন্তন আমি সত্যি নিকোলায়েভিচকে দেখিতে গিয়াছিলাম। তাহার পর আট দিবস পার হইয়া গেল। কিন্তু এখনো তাহাকে দেখিবার ভাবটি গুছাইয়া আনিতে পারছিনে। টলস্টয়ের যে জিনিসটাআমায় প্রথমেই আঘাত করিল তাহা হইল তাহার চেহারা! টলস্টয় এমন হইবেআমি ভাবিতে পারি নাই। আমার ধারণা ছিল, টলস্টয় হইবেন আরো লম্বা, আরোচওড়া, আরো শক্ত! কিন্তু আমি সামনে দেখিলাম একটি ছোটখাটো বৃদ্ধ মানুষকে।,,,কিন্তু এই বুড়ো মানুষটি যবে কথা কইতে আরম্ভ করিলেন তখন আমি অবাক হইয়াতাহার কথা শুনিতে লাগিলাম। যাহাই তিনি বয়ান করিলেন আমার ধারণা মতে ভুল কিংবা ঠিক, সবই যেমন গভীর তেমনি সহজ এবং অসম্ভব রকম আকর্ষণীয় বলিয়া আমার বোধ হইতে লাগিল। তাহার চরিত্রের সবচেয়ে বড় জিনিস হইল তাহারসরলতা। সবকিছু মিলইয়া আপনার মনে হইবে যেন সঙ্গীতের অর্কেস্ট্রা বাঐক্যতান। সে সঙ্গীতে সব যন্ত্রই যে সুরের সঙ্গত সৃষ্টি করিয়া বাজে এমন নহে। ,,, আসল অনুভূতি হইল, লিও টলস্টয়কে দেখিতে দেখিতে মন ভরিয়া ওঠে আর মনে হয় আমিও তো মানুষ। তবু বড় কথা এই নহে যে, লিও টলস্টয় একজন মানুষ। বড় কথা এই যে, একজন মানুষও লিও টলস্টয় হইতে পারেন”। অলেখকের এক কলমের কালি শেষ হইয়া আসিল। গোর্কির কথা দিয়াই শেষ করিতেছি, বড় কথা এই নহে গোর্কি একজন মানুষ। বড় কথা হইল একজন মানুষও গোর্কি হইতে পারেন। অলেখককে দিয়া অলেখা লেখাইবার ফলে লেখক নাহিদুল ইসলাম স্যার গোর্কি হইতে পারেন।

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম দিন